ডেস্ক রিপোর্ট : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। তবে যেখানে অবৈধ ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র ও অবৈধ টাকা—এ তিনের সমন্বয় ঘটবে, সেখানে ‘ফায়ারিং’ হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে তখনই যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আক্রান্ত হচ্ছে।
‘মাদকবিরোধী অভিযান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে ওই বৈঠকটির আয়োজক ছিল প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এক মাসেরও কম সময়ে চলমান অভিযানে প্রায় দেড় শ মানুষ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। মাদকবিরোধী এই কঠোর অভিযানের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত আছে। তবে টেকনাফে যুবলীগের নেতা একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা অভিযানকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। আজকের গোলটেবিল বৈঠকেও ঘুরেফিরে এসেছে একরামুল ও ‘বন্দুকযুদ্ধের’ যথার্থতা প্রসঙ্গ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, দেশের পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থা আলাদা আলাদা করে তালিকা করেছে। সব তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের কাছে নিরাপত্তা বাহিনী যাচ্ছে। অভিযানে হত্যার বিষয়ে যত আলোচনা হচ্ছে অন্যান্য কর্মকাণ্ড সে তুলনায় তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিরোধী দলকে কোণঠাসা করা, কারও কণ্ঠরোধ করা এই অভিযানের লক্ষ্য নয় এবং অভিযানে অপরাধীদের কেউ বাদ যাবে না বলে দাবি করেন আসাদুজ্জামান খান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা শুধু হত্যার কথা বলছেন। একবারও কিন্তু বলছেন না কত মানুষকে আমরা গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি। আমাদের কারাগারের ৩৫ হাজার বন্দী রাখার ব্যবস্থা আছে। এই মুহূর্তে সেখানে আছেন ৮৬ হাজার ৩৪৯ জন। এর ভেতরে ৩৯ শতাংশই মাদকসংশ্লিষ্ট মামলায়। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছে। স্বাধীনতার সময় আপনারা কি কে ভালো পাকিস্তানি, কে খারাপ? কে ভালো দালাল কে মন্দ, সেটা বিবেচনা করে গুলি ছুড়েছিলেন?’
একরামুল প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আইন সবার জন্য সমান। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারও অপরাধ প্রমাণিত হয়, তিনি ছাড় পাবেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ কারাগারে আছেন—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই উদাহরণ টেনে জানান যেই অপরাধী হোক না কেন, তার বিচার হবে।
এদিকে গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের আদালতে তোলার দরকার নেই। তাদের গুলি করে দেওয়া হোক। বিএনপির সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান অভিযানের পক্ষে কথা বলেছেন।
আখতারুজ্জামান বলেন, যারা মাদক ব্যবসায়ী তারা আর মানুষ থাকে না। অমানুষ হয়ে যায়। অন্যদিকে বিএনপির সাবেক সাংসদ সরদার সাখওায়াৎ হোসেন বকুল বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন সাংসদ বদিকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার প্রমাণ নেই। একরামুল নিহত হওয়ার পর অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। যদি সুনির্দিষ্ট তালিকার ভিত্তিতে অভিযান হয়ে থাকে তাহলে একরামুলের ভূমিকা কী ছিল, সেটা পরিষ্কার করা হোক।’
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এম ইমদাদুল হক বলেছেন, অপরাধীকে পক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত। সে সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা হলে অমানুষ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্যদের আর কোনো তফাৎ থাকে না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোনো অবস্থাতেই আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন।