Current Date:Oct 4, 2024

আফগানিস্তানে ১৪ বছরের কিশোরের কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব(edit)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বহু শিশু-কিশোর এতিম হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কঠোর বাস্তবতা তাদেরকে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য করছে। এমনই এক কিশোর নাম ফয়সাল। তার বয়স ১৪। এই বয়সে তার হেসে খেলে বেড়ানোর কথা। অথচ তার বদলে তাকে ঘুড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। তাদের বাড়িতেই একটি কামরায় ঘুড়ি তৈরি করা হয়। বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার কথা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সপ্তম শ্রেণীর এই ছাত্র প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। সাতটার সময় তার স্কুল শুরু হয়। স্কুল থেকে ফিরে এসে সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত তাকে একটানা কাজ করতে হয়।

ফয়সাল বলে, আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। স্কুল শেষে আমি বাড়িতে ঘুড়ি তৈরি করে বাজারে নিজে যাই। সেগুলো বিক্রি করে আমার আট সদস্যের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করি।

আন্তর্জাতিক শিশু দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ফয়সাল জানায়, তার এ দিনটি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তাকে প্রতিদিনের মতো সেদিনও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১ জুন শিশু দিবস পালিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস আফগানিস্তানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও কিন্ডারগার্টেন উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি পালিত হয়।

আরও : আফগানিস্তানে ১৪ বছরের কিশোরের কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব
ঘুড়ি উৎসব।

ছোট একটি মাদুরের ওপর বসে ফয়সাল তার সংগ্রামী জীবনের কথা বলছিল। তার চারপাশে নানা রঙের ঘুড়ি ছড়িয়ে আছে। সে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের বিনিময়ে মাসে তার আয় মাত্র চার মার্কিন ডলারেরও কম। তার বাবা মোহাম্মাদ আজিজ বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তিনি যতটা সম্ভব তাকে সাহায্য করেন। তার বড় ভাইও ঘুড়ি বানাতে সাহায্য করে। সে সদ্য স্কুল পাশ করেছে। ঘুড়ি তৈরির অধিকাংশ কাঁচামাল পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। তারা ঘুড়ি তৈরি করে দেশেই বিক্রি করে।

আফগান শিশুরা ইট তৈরি, নির্মাণ, খনি, কৃষিসহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত। এরা কঠোর বাস্তবতার মুখে পড়ে শিশু শ্রমিক হতে বাধ্য হয়েছে। লেখাপড়ার খরচ ও নিত্য দিনের প্রয়োজন মেটাতে তাদের মাসে ১৪০ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়। দেশটিতে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করার ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও শিশু শ্রম বেশ সাধারণ একটি ঘটনা।

ফয়সাল দীর্ঘশ্বাস চাপা দিয়ে জানায়, যাই হোক এটা ভেবে আমি আনন্দিত যে আমার পেশার মাধ্যমে আমি অন্য শিশুদের মজা দিতে পারছি। ঘুড়ি উড়ানো আফগানিস্তানের একটি জনপ্রিয় খেলা। ১শ’ বছরের বেশি সময় ধরে এখানকার মানুষ ঘুড়ি উড়ায়। শরৎকাল, যখন সারাদিনই মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যায়, তখনই ঘুড়ি উড়ানোর উপযুক্ত সময়। বাসস।

Share