বিনোদন প্রতিবেদক : আসছে ঈদে ভারতের এসকে মুভিজ প্রযোজিত ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বলে শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে জয়দীপ মুখার্জি পরিচালিত ছবিটির শুটিং হয়েছে কলকাতা ও লন্ডনে। ছবিটির পরিচালক জয়দীপ মুখার্জি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অতিথি পরিচালক হিসেবে সদস্যপদ চেয়ে আবেদন করেছেন।
গতকাল রোববার তিনি পরিচালক সমিতিতে ‘ভাইজান এলো রে’ নামে বাংলাদেশের প্রযোজনায় একটি নতুন ছবি নির্মাণ করতে চাই এই মর্মে সদস্যপদ চেয়েছেন। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ছবিটির শুটিং এরই মধ্যে শেষের পথে। এছাড়াও ছবির বেশিরভাগ কলাকুশলী ভারতীয়। সব মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে।
রোববার সন্ধ্যায় এফডিসিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কার্যালয়ে সমিতির মহাপরিচালক বদিউল আলম খোকনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।
বিদেশী পরিচালকের সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে) তিন ধরনের সদস্যপদ রয়েছে। আজীবন সদস্য, সহযোগী সদস্য ও সাধারণ সদস্য। এছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তবে বাংলাদেশের কোনো প্রযোজক দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ছবি বানাতে চান এমন কেউ চাইলে অতিথি সদস্য হতে পারেন। সদস্য হওয়ার পর তিনি পরিচালক সমিতির ভোটাধিকার না পেলেও পরিচালক সমিতির সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর আগে ভারতের গৌতম ঘোষ নিয়মনীতি মেনেই ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘শঙ্খচিল’, ‘মনের মানুষ’ ছবিগুলো নির্মাণ করেছেন।
ভারতের এসকে মুভিজ প্রযোজিত ‘ভাইজান এলো রে’ ছবি বাংলাদেশে মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ সরকার চলচ্চিত্রে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে, ভারতের এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকা ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য নিয়ম মেনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতিতে নাম নিবন্ধন করছেন। তিনি পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের পরিচালক না নিলেও বাইরের পরিচালক দিয়ে কাজ করাতে পারেন।’
“তারই ধারাবাহিকতায় জয়দীপ মুখার্জি আমাদের পরিচালক সমিতির সদস্য হয়ে ছবি নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় ভারতের পরিচালক সমিতির সদস্য হলে প্রত্যায়ন পত্র, আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ অন্যান্য যা কিছু প্রয়োজন তা সাবমিট করতে। এ সময় ওয়ার্ক পারমিটের কপিও তাদের কাছে চাওয়া হয়। কিন্তু তারা জানায়, ‘আপনারা ছবির নামসহ পরিচালককে ছবিটি নির্মাণের অনুমোদন দিলে আমরা সেই মোতাবেক ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করবো।’ আমরা জয়দীপ মুখার্জিকে আবেদন ফরম জমা দিতে বলি। তারপর সমিতির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎতের দিন ধার্য করবো বলে জানাই। অথচ ৬ মে যখন জয়দীপ মুখার্জি যখন ছবির নামসহ আবেদন করলেন সেখানে আমরা দেখলাম ছবির নাম ‘ভাইজান এলো রে’। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জেনেছি কলকাতা এবং লন্ডনে এই ছবিটির শুটিং হয়েছে। এরই মধ্যে ছবিটির শুটিং শেষদিকে রয়েছে।”
জয়দীপ মুখার্জির আবেদনপত্রে কী ছিল? এ ব্যাপারে খোকন বলেন, “প্রথম আবেদনে তিনি লিখেছেন, ‘আমি জয়দীপ মুখার্জি ভারতের ছবির একজন পরিচালক। আমার পরিচালনায় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। যার সবগুলোই ব্যবসা সফল। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যে শিকারি ও নবাব। বাংলাদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ইন্টারন্যাশনাল আমাকে দিয়ে একটি বাংলাদেশের ছবি নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমিও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সকল নিয়ম মেনে ছবিটি বানাতে ইচ্ছুক। অতএব সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে আমাকে আপনার সমিতির একজন অতিথি পরিচালকের সদস্যপদ দিয়ে বাধিত করিবেন।”
বদিউল আলম খোকন আরও বলেন, ‘আমরা শিল্পী ও কলাকুশলীদের যে তালিকা পেয়েছি সেখানে বাংলাদেশের কলাকুশলীদের একেবারেই বঞ্চিত করা হয়েছে। সরকার বাইরে থেকে ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ করে দিয়েছে যাতে করে এদেশেরও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজের সুযোগ পান। গার্মেন্টস সেক্টরেও এধরনের বিনিয়োগের সুযোগ আছে। কিন্তু সেখানেও এটাও উল্লেখ আছে যে ৬০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী বাংলাদেশ থেকে নিতে হবে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিচালক সমিতির মহাসচিব বলেন, কিন্তু আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কী হচ্ছে? ওরা বিনিয়োগ করছেই শুধুমাত্র ভারতের ছবি মুক্তি দিয়ে আমাদের দেশের টাকা বেআইনিভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এমন অবস্থায় জয়দীপ মুখার্জি পরিচালক সমিতির সদস্যপদ পাবেন? এমন প্রশ্নে খোকন বলেন, ‘এটা এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ আমি একা তো আর সিদ্ধান্ত নেয়া বা জানানোর কেউ না। বৃহস্পতিবার পরিচালক সমিতির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
পরিচালক সমিতির সদস্যপদ না পেলে ছবিটি মুক্তিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন, ‘ছবিটি যদি সেন্সর পায় তাহলে তো মুক্তি পেতে বাধা নেই। তবে সাফটা বা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ছবিটি যদি আসে তাহলে ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবে না। কারণ আইন অনুযায়ী যদি বাংলাদেশের কোনো ছবি না থাকে। তাহলেই কেবল বাইরের ছবি মুক্তি পেতে পারে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
এমন অবস্থায় ঈদে ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিটি আদৌ মুক্তি পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শ্রাবন্তী, পায়েল সরকারসহ অনেকে।