Current Date:Nov 30, 2024

করোনার মধ্যেও জনতা ক্যাপিটালের মুনাফায় বড় উল্লম্ফন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাষ্ট্রায়াত্ত জনতা ব্যাংকের পাশাপাশি এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে ব্যাংকটির পাশাপাশি বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (জেসিআইএল)। ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যেও ব্যাংকের এই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি বড় অংকের মুনাফা করেছে। দেশের শেয়ারবাজারে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে নিট মুনাফা করেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে প্রায় ৬৬ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ থাকা সহ বিভিন্ন কারণে যখন অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকই মুনাফা করতে পারেনি তখন চমক দেখিয়েছে জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্ট। ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর মুনাফা বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। ২০১৯ সালে জনতা ক্যাপিটালের নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। জনতা ব্যাংকের এই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরেও ভালো মুনাফা করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। জনতা ক্যাপিটাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি টাকার বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে। বিনিয়োগকারী ও জনতা ক্যাপিটালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়ে যাওয়ার এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই ভালো মুনাফা করতে পেরেছে জনতা ব্যাংকের এই প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী শহীদুল হক এফসিএমএ বলেন, “জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পর্ষদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং আমাদের কর্মীবাহিনীর কর্মপ্রচেষ্টার ফলে আমরা ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে যাচ্ছি। আমাদের এই বড় অর্জনের পেছনে কাজ করেছে আমাদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা। করোনা মহামারির মধ্যে যখন বাজারের অবস্থা খারাপ ছিল তখন অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকই ফোর্সড সেল করে তাদের বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করেছে। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অন্যদিকে বাজার খারাপ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বিনিয়োগ পুরোপুরি উঠাতে পারেনি। আর আমাদের বিনিয়োগ যেহেতু ভাল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোতে ছিল, তাই আমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলাম।”
শহীদুল হক বলেন, “করোনা মহামারির মধ্যে অনেক বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও নেগেটিভ হয়ে গেলেও তখন আমরা তাদের ওপর কোন ইন্টারেস্ট চার্জ করিনি। পরে যখন বাজার ভালো হলো তখন ভাল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দাম বেড়ে গেল। এতে আমাদের সুদ আয় কম হলেও কমিশন আয় ভালো হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠান যেমন লাভবান হয়েছে, তেমিন বিনিয়োগকারীদের আস্থাও আমাদের ওপর বেড়েছে। যার ভাল ফলাফল আমরা ২০২১ সালে এসে আরও বেশি পাচ্ছি। অনেক নতুন বিনিয়োগকারী আমাদের এখানে এসে বিনিয়োগ করছে।”
জনতা ক্যাপিটাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ৪০ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালের এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট পরিচালন মুনাফা ছিল ১ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৩০ গুণ; অঙ্কের হিসাবে যা ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
এদিকে ২০২০ সালে মুনাফা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) বেড়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে ইপিএস ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৭ টাকা সেখানে ২০২০ সালে ইপিএস বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ২৫ টাকা। পাশাপাশি এনএভিপিএস’ও ১০ দশমিক ২২ টাকা থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৪৭ টাকা হয়েছে।
জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্টের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শহীদুল হক বলেন, “ভালো কোম্পানিগুলোকে আমরা বাজারে নিয়ে আসতে চাই। পাশাপাশি বন্ড নিয়ে আমরা কাজ করতে যাচ্ছি। আর যেসব বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও নেগেটিভ আছে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাদের পোর্টফোলিও আমরা বুস্টআপ করে পজেটিভ ইক্যুইটিতে নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।” তিনি জানান, আগে জনতা ক্যাপিটালের মার্জিন ঋণে সুদ হার ছিল ১৩ শতাংশ, যা আমরা ১২ শতাংশে নিয়ে এসেছি। এছাড়া আগে ম্যানেজমেন্ট ফি ১ শতাংশ থাকলেও সেটা এখন ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে বর্তমানে জনতা ক্যাপিটালের ক্লায়েন্ট বেজড ওয়েব পোর্টাল তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।

Share