আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হোয়াইট হাউজের সাবেক কর্মী মনিকা লিউনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যেভাবে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, তা ছিল ‘ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার’।
১৯৯৮ সালে ওভাল অফিসে ক্লিনটন-লিউনস্কি যৌন সম্পর্কের খবর বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে। ওই সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা বলায় প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে সে সময় অভিসংশনের হুমকিতেও পড়তে হয়।
মনিকা লিউনস্কি তখন ২২ বছর বয়সী একজন ইন্টার্ন। আর প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের বয়স তখন ৪৯। যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের ‘মি টু মুভমেন্টের’ প্রেক্ষাপটে ভ্যানিটি ফেয়ারে লেখা এক নিবন্ধে লিউনস্কি সেই সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কেলেঙ্কারির পর পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগতে হয়েছিল বলে ওই নিবন্ধে জানিয়েছেন লিউনস্কি। যেভাবে ওই প্রেমের খবর সংবাদপত্র আর আদালতের শুনানিতে আসছিল, তাতে তাকে রীতিমত একঘরে হয়ে যেতে হয়েছিল।
তাদের সেই প্রেম ছিল ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় খবর। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন শুরুতে অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে স্বীকার করে নেন যে হোয়াইট হাউজের একজন সাবেক ইন্টার্নের সঙ্গে তার ‘অন্তরঙ্গ সম্পর্ক’ হয়েছিল, যা উচিৎ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা এরপর প্রেসিডেন্টের অভিসংশনের দাবি তোলেন। তার অভিযোগ ছিল, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন পরে স্বীকার করে নিলেও শুরুতে ফেডারেল তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন।
অবশ্য ক্লিনটনকে অভিসংশনের সেই চেষ্টা কাজে আসেনি। ২০০১ সাল পর্যন্ত পুরো মেয়াদই তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।
আজকের ৪৪ বছর বয়সী মনিকা লিউনস্কি লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সঙ্গে ওই গোপন প্রেমের সম্পর্ক যে সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছিল, তা তিনি স্বীকার করেন। কিন্তু সে সময় দুজনের মধ্যে বয়স আর ক্ষমতার যে বিস্তর ব্যবধান ছিল, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
কী থেকে কী হতে পারে- সে বিষয়ে তরুণ লিউনস্কির ধারণা এখনকার মত পরিপক্ক ছিল না। এখনও তাকে সেই প্রেমের জন্য ‘প্রতিদিন পস্তাতে হচ্ছে’।
তিনি লিখেছেন, “অভিধানে ‘consent’ মানে লেখা আছে- কোনো কিছুর জন্য সম্মতি দেওয়া। কিন্তু এই ‘কোনো কিছু’ মানেটা কী? যদি তার (ক্লিনটন) অবস্থান আর আমার তখনকার বয়সটা বিবেচনা করি?
“তিনি ছিলেন আমার বস। তখন তিনিই ছিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। আমার চেয়ে তিনি ২৭ বছরের বড়, জীবন সম্পর্কে যার অভিজ্ঞতা ছিল আমারে চেয়ে অনেক বেশি।”
বিবিসি লিখেছে, প্রেমের খবর প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর ঝঞ্ঝামুখর কয়েকটা বছর পেরিয়ে নিজেকে অনেকখানি অন্তরালে রেখেছিলেন মনিকা লিউনস্কি। ২০১৪ সালে আবার তিনি সামনে আসেন এবং ওই সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন।
নারীরা এখন যেভাবে নিজেদের যৌন নিগ্রহের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রতিবাদী হচ্ছেন, তা নিয়েও ভ্যানিটি ফেয়ারের ওই নিবন্ধে লিখেছেন লিউনস্কি।
তিনি জানিয়েছেন, মি টু মুভমেন্টের নেতৃস্থানীয় একজন যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, নিজের বিপদের সময় মনিকা লিউনস্কিকে যেভাবে একা একা লড়তে হয়েছিল, সে কথা মনে করে যখন সান্ত্বনা দিলেন, তখন অশ্রুতে ভিজে উঠেছিল তার চোখ।
“কিছু মানুষ আছেন, যারা মনে করেন যে হোয়াইট হাউজে আমার অভিজ্ঞতা কোনোভাবেই মি টু আন্দোলনের বিষয় হতে পারে না। তারা মনে করেন, বিল ক্লিনটন আর আমার মধ্যে যা হয়েছিল, তাকে যৌন হয়রানি বলা যায় না। তবে এটা আমরা স্বীকার করছি যে ওই ঘটনা ছিল ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার।”
লিউনস্কি তার নিবন্ধের শিরোনাম দিয়েছেন ‘ইমার্জিং ফ্রম দা হাউজ অব গ্যাসলাইট ইন দা এইজ অব #মিটু’
তিনি লিখেছেন, “ওই ঘটনার পর থেকে আমি যা শিখেছি তা হল- একজন মানুষ তার নিজের কাছ থেকে নিজের অভিজ্ঞতার কাছ পালাতে পারে না। তার বদলে আমাদের অতীতের সঙ্গে বর্তমানকে মিলিয়ে নিতে হয়।”
নিজের জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে, নতুনভাবে দেখতে, সেই জীবন বদলে ফেলতে যে ক্ষমতা দরকার, লিউনস্কির ভাষায় সেই ক্ষমতা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটি কাজ, বিশেষ করে তার জন্য, যাকে এমন নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে, যাতে সে ভাবতে বাধ্য হয় যে দোষ আসলে তারই।