Current Date:Oct 2, 2024

খুলনা সিটি নির্বাচনে জয় দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

নিউজ ডেস্ক : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক জিতবেনই-এমন একটা মনোভাব সরকারি দল আওয়ামী লীগের। প্রার্থী শক্তিশালী, দল ঐক্যবদ্ধ, আঞ্চলিক ভোটের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি দলের প্রার্থী মেয়র হলে উন্নয়ন হবে-মোটাদাগে এই চার কারণে জয় দেখছে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, তাদের প্রার্থী শক্তিশালী, সরকারের ওপর মানুষ ক্ষুব্ধ এবং দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাবন্দী বলে ভোটারদের সহানুভূতি পাওয়া যাবে। ফলে সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর জয় হবেই।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-উভয় দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, খুলনায় প্রধান দুই দলের প্রার্থীই শক্তিশালী। সাংগঠনিক দক্ষতাও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সরকারি দল মনে করছে, স্থানীয় মানুষের উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা জয়ের নির্ণায়ক হবে। আর বিএনপি মনে করছে, সরকারবিরোধী মনোভাবই ফলাফল ঠিক করে দেবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকেরা খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গাজীপুরসহ অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনে করছে, খুলনার ফল অন্য সিটির নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। আর সরকারের উন্নয়নে ভোটারদের আস্থা এসেছে-এমন প্রচার পাবে, যা জাতীয় নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, এই বিজয়ে বিএনপি জনপ্রিয় দল, এটা প্রমাণ হবে। হারলেও ভোটের নানা নেতিবাচক দিক তুলে ধরে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-তা প্রচার করা যাবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, চলতি মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা সফর করবেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগের খুলনা সিটি নির্বাচনে পরাজয় চায় না আওয়ামী লীগ। আবার ভোটটা প্রশ্নবিদ্ধ যাতে না হয়, সেই ভাবনাও আছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র বা জনপ্রতিনিধির দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। তবে খুলনায় দুই প্রার্থীই শক্তিশালী ও রাজনৈতিকভাবে পরিচিত। ফলে কাউকে আলাদা করা কঠিন। তবে দলীয় প্রতীকে ভোট বলে দলের জনপ্রিয়তা বড় ভূমিকা রাখবে। তাঁর মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর বলে সুশাসন, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভোটারদের বিবেচনায় থাকবে।

আওয়ামী লীগ কেন আত্মবিশ্বাসী?
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বর্তমানে সারা দেশেই দলটির মূল সমস্যা অভ্যন্তরীণ কোন্দল। খুলনাও এর বাইরে নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অভ্যন্তরীণ জরিপে বিএনপির এগিয়ে থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নানা হিসাব কষে আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই সাবেক মেয়র ও মহানগর সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেককে প্রার্থী করার পক্ষে। কিন্তু তিনি সাংসদ পদ ছেড়ে অনিশ্চয়তার মুখে মেয়র পদের জন্য লড়তে আগ্রহী ছিলেন না। খালেক ছাড়া সাতজন প্রার্থী দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন। দলীয় মনোনয়ন বোর্ড ফরম সংগ্রহ না করা খালেককে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেয়।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তালুকদার খালেক প্রার্থী হওয়ায় দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা গেছে। এ ছাড়া তিনি আগে মেয়র ছিলেন। সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে কাজ করেছেন-এটা ভোটারদের কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে আছে।

খুলনার ভোটে আঞ্চলিক ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, বৃহত্তর বরিশাল, বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার মানুষ উল্লেখযোগ্য। এসব জেলার সমিতিগুলোও শক্তিশালী। এবারের নির্বাচনে এসব জেলা সমিতিগুলোকে তালুকদার খালেকের পক্ষে ভালোভাবে নামানোর চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ।

গত পাঁচ বছর খুলনার মেয়র ছিলেন বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি। মামলার কারণে চাপে ছিলেন তিনি। সরকারের সহায়তা না পাওয়ায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। সরকার নানা রকম উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিরোধী দলের প্রার্থীকে জয়ী করলে উন্নয়নে পিছিয়ে যেতে হবে-এমন একটা আলোচনা তোলা হয়েছে সরকারি দলের পক্ষ থেকে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের মতে, খুলনার নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির আবহ না এনে প্রচারে স্থানীয় সমস্যার ওপরই জোর দেওয়ার কৌশল নেয় দলটি। খালেকের মেয়র হওয়ার অর্থই উন্নয়ন-এটাই ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় আগেরবার বিএনপির মেয়রকে নির্বাচিত করে মানুষ ঠকেছে। এবার এই ভুল আর করবে না। উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই ভোট দেবে। তালুকদার খালেক মেয়র থাকা অবস্থায় উন্নয়ন করে দেখিয়েছেন যে তিনিই এই পদের জন্য যোগ্য ও দক্ষ। সুতরাং, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।

সরকারবিরোধী মনোভাবেই ভরসা বিএনপির
শেষ পর্যন্ত সরকারবিরোধী মনোভাব ও জাতীয় রাজনীতিই খুলনায় ভোটের ফলাফলে প্রভাব রাখবে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, এর আগে গত জাতীয় সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের ভোট ঠিকভাবে দিতে পারেননি ভোটাররা। এর জন্য সরকারি দল আওয়ামী লীগের ওপর ভোটাররাও ক্ষুব্ধ। সুষ্ঠু ভোট হলে এর জবাব দেবেন ভোটাররা। এ ছাড়া সরকারি দলের মন্ত্রী, সাংসদ, জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের দ্বারা অনেক মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত, নির্যাতিত। সিটি করপোরেশনের ভোটে এর প্রভাব পড়বে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, দলীয় প্রার্থী নজরুল ইসলাম সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতা। খুলনা অঞ্চলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের পর তাঁকেই পরবর্তী নেতা মনে করেন দলের নেতারা। এ জন্য তাঁর পেছনে সবাই ঐক্যবদ্ধ।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলটির প্রতি মানুষের সহানুভূতি বেড়েছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে ‘মায়ের মুক্তি চাই, ধানের শীষে ভোট চাই’ স্লোগানসংবলিত প্রচুর লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার প্রতিনিধি এবং ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নজরুল ইসলাম সেই সহানুভূতি পেতে পারেন। আর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয়ের মধ্যেও নজরুল ইসলাম খুলনা সদর আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমে তাঁর জনসম্পৃক্ততার পরিচয় মেলে।

আওয়ামী লীগ তরুণ ভোটারদের পাশে পাওয়ার আশা করছে। বিএনপিও মনে করছে তরুণরা তাদের পক্ষে থাকবেন। সাম্প্রতিক সময়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন তরুণেরাই করেছেন। ফলে শিক্ষিত বেকার তরুণরা সরকারি দলের বিপক্ষেই ভোট দেবেন-এমন প্রত্যাশা বিএনপির। এর বাইরে খুলনায় জোটের শরিক জামায়াত, ইসলামি দল এবং আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটব্যাংক আছে। এগুলোকে নিজেদের শক্তির জায়গা ভাবছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খুলনা নির্বাচনে বিএনপির সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় , খুলনায় জয়ের ব্যাপারে তাঁদের কোনো সংশয় নেই। তবে ভোটাররা ঠিকভাবে ভোট দিতে পারবেন কি না, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিরপেক্ষ থাকবে কি না-সেই শঙ্কা আছে। ভোট সুষ্ঠু হলে কেন বিএনপি জিতবে এমন প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই নেতা বলেন, আগেরবার মেয়র ছিলেন বিএনপির। এর মধ্যে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেনি। বরং সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। আর গতবারের তুলনায় এবার বিএনপির প্রার্থী শক্তিশালী, ফলে জয়ও নিশ্চিত।

Share