স্পোর্টস ডেস্ক : নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মাঝমাঠে আলো ছড়িয়েছেন। আজ ফ্রান্সের বিপক্ষেও চোখ থাকবে এভার বানেগার ওপর। তিনি কি পারবেন প্রত্যাশা পূরণ করতে?
মেসি তো মেসিই। তাঁকে নিয়ে নতুন করে আর কী বলার থাকতে পারে। কাজানে আজ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে যখন মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স, সব চোখ থাকবে তাঁর ওপর। ফ্রান্স কোচের সব কৌশল থাকবে তাঁকে আটকানোর, অধিনায়ককে ঘিরেই রচিত হবে আর্জেন্টিনার কৌশলও। কাল ফ্রান্সের সংবাদ সম্মেলনেও বারবার ঘুরেফিরে মেসি, মেসি, মেসি!
কিন্তু টিম মিটিংয়ে যখন বসবে দুই দল, আরেকটা নাম ঘুরেফিরে আসতে পারে—এভার বানেগা। শুধু এই ম্যাচ কেন, মাঝমাঠে যেকোনো ফুটবল ম্যাচেরই জয়-হার নির্ধারিত হয়ে যায়। সেই হিসেবে আর্জেন্টিনার ভরসা আর ফ্রান্সের পথের কাঁটা তো আসলে বানেগাই। নাইজেরিয়া যা টের পেয়েছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে মেসির দুর্দান্ত গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায়, গোলের আগে মেসির তিন জাদুকরি স্পর্শ চোখ ধাঁধিয়েছে। কিন্তু মেসির কাছে যে পাসটা গেল, সেটিও কি কম? মাঝমাঠ থেকে পুরো নাইজেরিয়ার মাঝমাঠ আর রক্ষণকে ‘বাইপাস’ করে যাওয়া বানেগার ৪০ গজি পাস! পাসটার ভিডিও আরেকবার দেখলে চোখে পড়বে, নিজেদের অর্ধে মাঝবৃত্তের পাশে বানেগার পায়ে বল যেতেই আপাত ‘জগিং’ করতে থাকা মেসি দৌড় শুরু করেছিলেন নাইজেরিয়া সেন্টার ব্যাকের অগোচরে। যেন জানতেন, বানেগা পাসটা এখনই দেবেন। বানেগাও হতাশ করেননি! যদিও ম্যাচের পর বানেগা যেন বিনয়ের অবতার, ‘মেসির ওই গোলের পাসটা নিয়ে বলব, আমি শুধু মাথা তুলে ওকে দেখেছি, এরপর বলটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছি। বাকিটা ও-ই করেছে।’
Pran upযদিও মাঠে তাঁর ধারাবাহিকতা সব সময়ই প্রশ্নসাপেক্ষ, তবু বানেগা থাকলেই নাকি ভালো খেলেন মেসি। আর্জেন্টাইন ‘নাম্বার টেন’ নিজেই একবার বলেছিলেন, ‘এভারের (বানেগা) পাশে খেলাটা আনন্দের।’ মেসি সেই ছোট্ট বয়সে নিউয়েলস ওল্ড বয়েজে থাকার সময় থেকেই দুজনের পরিচয়, এ কারণেই হয়তো।
এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম দুই ম্যাচে কোনো এক অজানা কারণে বানেগা ছিলেন না। আর্জেন্টিনাও সেই দুই ম্যাচে ছিল ছন্দহীন, মেসি বিবর্ণ। বাঁচা-মরার তৃতীয় ম্যাচে বানেগা এলেন একাদশে, মেসির গোল বানালেন, দলের মাঝমাঠকে দেখাল প্রাণবন্ত। পরিসংখ্যানও এর প্রমাণ দিচ্ছে। মেসিকে কেউ ঠিকমতো পাস দেয় না বলে আর্জেন্টিনা দল নিয়ে যে সমালোচনা, নাইজেরিয়া ম্যাচে তা ঘুচেছে কিছুটা। বানেগা ম্যাচে যতগুলো পাস খেলেছিলেন, তার মধ্যে মেসির দিকে ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬টি, সর্বোচ্চ মাঝমাঠে সঙ্গী হাভিয়ের মাচেরানোর দিকে মেসির পাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছে বানেগার দিকেই (১১)।
তা প্রথম ম্যাচ দুটিতে কেন একাদশে ছিলেন না, কে জানে! সাম্পাওলি কোচ হয়ে আসার পর তো বানেগার সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেছেন। গত জুলাইয়ে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সাম্পাওলি ও তাঁর সহকারী কোচ বানেগাকে একের পর এক ভিডিও দেখিয়ে তাঁর কাছে কী চান, কোথায় তাঁর ভুল, সেসব ব্যাখ্যা করেছিলেন। তখন আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমের ধারণা ছিল, বানেগাই হবেন মেসির পেছনে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠে সৃষ্টিশীলতার উৎস। সাম্পাওলিও তখন বলেছিলেন, ‘বানেগার মতো একজন খেলোয়াড় মেসিকে প্রতিপক্ষের বক্সের দিকে আরও বেশি যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।’
কিন্তু এরপর দলে আসা–যাওয়ার মধ্যেই বানেগা! গত বছর যখন নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে আবার ফিরলেন, তখন আর্জেন্টাইন দৈনিক লা নাসিওনের কলামে লেখাটা ছিল এই, ‘বানেগা ফিরে আসায় প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে দেওয়ার মতো সেই পাসগুলোও ফিরে আসবে, আর মেসিকে বারবার নিচে নেমে খেলা গড়ার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেবে।’
নাইজেরিয়া ম্যাচে তা হয়েছে। আজ ফ্রান্সের বিপক্ষেও একই দল, একই কৌশলে নামতে পারে আর্জেন্টিনা। আবার গুঞ্জন আছে, মেসিকে ‘ফলস নাইন’ রেখে দুই উইংয়ে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া আর ক্রিস্টিয়ান পাভোনকেও আনা হতে পারে, বাদ পড়তে পারেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। তাতে মেসির সঙ্গে বানেগার ‘যোগাযোগ’টা আরও বাড়ারই কথা।
তাহলে যে আর্জেন্টিনারই লাভ। পুরো মাঠের প্রতিটি পজিশনে দুর্দান্ত মানসম্পন্ন সব ফুটবলারে ভরা ফ্রান্সকে টেক্কা দিতে মেসিকে সেরা ফর্মে চাই আর্জেন্টিনার, সে জন্য চাই মেসির ‘সঙ্গী’ হওয়ার মতো কাউকেও। নাইজেরিয়া ম্যাচের মতো যা হতে পারেন বানেগা!