অনলাইন ডেস্ক : সম্মেলনের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি পায়নি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়েছেন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবে ঘোষণা হবে কমিটি, কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে এ নিয়ে অনেকটাই ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সূত্র মতে, ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন শেষে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে অধিকতর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতার নাম চূড়ান্ত তালিকায় আনা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে ছাত্রলীগের নেত্রীর নামও। এদের মধ্য হতেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সূত্র আরও জানান, ছাত্রলীগের সম্মেলনের পরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন ওঠে। এর মধ্যে চূড়ান্ত তালিকায় উঠে আসা অনেক ছাত্রনেতাও রয়েছে। ওইসব ছাত্রনেতার ব্যক্তিগত ও পরিবার সম্পর্কে নেতিবাচক নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভেসে বেড়াচ্ছে। একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী শিবিরের যোগাযোগ এবং আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীরা আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ ওঠার পর ঐসব প্রার্থীদের সম্পর্কে অধিকতর খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ কারণে নতুন কমিটি ঘোষণা বিলম্বিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিগত ৩ কমিটির নেতৃত্ব পরিবর্তন হয় কথিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। লোক দেখানো ভোটে ঘুরে ফিরে সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্টরাই নেতৃত্বে আসবে। পরে তারা সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করেছে। সাবেক কয়েক প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতাদের বলয়ে গড়া ঐ সিন্ডিকেটের বাইরে নেতৃত্বে আসা কঠিন ছিল। এবারো সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরপরই আলোচনায় উঠে আসে কথিত সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের বিষয়টি আলোচনায় আসায় ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে ভোট নয়, সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন তিনি। এক্ষেত্রে রাজপথের ত্যাগ, মেধা, আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে নেতৃত্ব আনার পরামর্শ দেন। ১১ মে সম্মেলনের উদ্বোধনকালে বিদায়ী কমিটির মেয়াদ ৯ মাস বেশি অতিবাহিত হওয়ায় কেউ যাতে বাদ না পড়ে, সেজন্য ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ ২৭ বছর বয়স সীমা ২৮ বছর পর্যন্ত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পুন:নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দাখিলকৃত মনোনয়ন ফরম নিয়ে বৈঠকে বসে গঠিন নির্বাচন কমিশন। পরে সভাপতি পদে ৬৬ জন ও সাধারণ সম্পাদক ১৬৯ জন বৈধ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। পরে ১২ মে কাউন্সিল অধিবেশনে ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির পদপ্রত্যাশীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী- ভোটে নয়, সমঝোতার কমিটির পক্ষে মত দেন উপস্থিত ছাত্রনেতারা। পরে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে সম্ভাব্য একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর কাছে তালিকা জমা দেওয়ার পর ফেইসবুক জুড়ে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরে নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা। অনেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে পছন্দীয় লোকের নাম ও ছবি দিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। তবে এসব যারা করছেন, তারা মূলত ঐ প্রার্থীকে বিতর্কিত করতে এসব করেছেন বলে জানা গেছে। এসব অপপ্রচার নিয়ে সকলকে সতর্ক করেন ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। তিনি তার ফেসবুকে পেজে বলেন, ফেসবুকে কুৎসা থেকে বিরত থাকুন। এসব ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখনো নতুন কমিটির ঘোষণা না হওয়ায় সবার আগ্রহ দেশের প্রাচীনতম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের দিকে। কারা আসছেন নেতৃত্বে, কখন ঘোষণা হতে পারে কমিটি। গণভবনের দিকে নজর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসার চেষ্টা করছেন পদপ্রত্যাশীদের অনেকে। ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ গতকাল বৃহস্পতিবার আমার সংবাদকে বলেন, আমরা প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। তিনি নতুন নেতৃত্ব ঘোষনা করবেন। সেটা কবে করবেন, তা জানি না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম গতকাল বৃহস্পতিবার আমার সংবাদ’কে বলেন, আমি সর্বশেষ আপডেট জানি না। আম্মার মৃত্যুর করণে খবর নিতে পারিনি। শুনেছি নেত্রী সম্ভাব্য প্রার্থীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন, তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে, কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা না হওয়ায় আটকে আছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন মহানগর ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে গত ২৫, ২৬ ও ২৯ এপ্রিল যথাক্রমে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, মহানগর উত্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কমিটি ঘোষণা হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে শাখা ৩টির কমিটি ঘোষণা আসতে পারে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে সাইফুর রহমান সোহাগ সভাপতি এবং জাকির হোসাইন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।