Current Date:Nov 22, 2024

প্রতিদিনই হোক “মা” দিবস

মেহের মামুন: আজ বিশ্ব “মা” দিবস। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিটি মায়ের সন্তানই তার মাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টু্ইটারে মায়ের প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করছেন। এই দিনটায় মাকে একটু বেশি স্বরণ করছেন। তাদের থেকে আমিও পিছিয়ে নেই। আমারও লিখতে মন চাইলো কিছু কথা। মা এমন একটা নাম, এমন একটা অনুভুতি, এমন একটা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা যার কোন তুলনা বা বিকল্প নেই “মা” শুধুই “মা” । মায়ের বিকল্প শুধুই মা, যে হারায় সেই বোঝে মা কী অমূল্য রত্ন। মাকে নিয়ে লেখার কোন শেষ নেই। কাগজ পুরোবে ,কলমের কালি শেষ হবে মায়ের বর্ননা লিখে শেষ হবার নয়।আজ বিশ্ব মা দিবস অনেকেই ঘটা করে এই দিবসটি পালন করেন। শুধু কি অন্য সবাই আমিও এই দিনে মায়ের প্রতি বেশি বেশি ভালবাসা দেখানোর চেষ্টা করি। আসলে মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও তার ত্যাগের কোন মূল্য কি কেউ দিতে পারে। মায়ের জন্য প্রতিটি দিনই মা দিবস। পৃথীবির সকল মায়ের গল্প রয়েছে। এখানে আমার মায়ের গল্পটাই তুলে ধরলাম। মায়ের কথা লিখতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকালেই বুঝাযাবে মা তার সন্তানের জন্য কতই না ত্যাগ করেছেন। অনেক অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়েছি। বাবাকে হারানোর পর মা আমাদের দুই ভাই ও এক বোনকে আগলে রেখেছেন পরম মমতায়। কোন দিনই বাবার অভাব বুঝতে দেননি। আমাদের পরিবারের উপার্জনক্ষম ছিলেন একমাত্র বাবা।বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরে ছিলেন মা। পরিবারের স্বচ্ছলতা যা ছিল সেটা আমাদের জন্য যথেস্ট না হলেও মা কখোনই আমাদের অভাবটা বুঝতে দেননি। আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে গেছেন। যখোন যেটা চেয়েছি সেটাই পেয়েছি। কোন কিছু্ই মা অপূর্ণ রাখেননি। হয়তো অন্য সবার মতো দিতে পারেননি কিন্তু তার চেস্টার কমতি ছিল না কখোনই। মাকে একদিন বলেছিলাম মা তুমি আমাদের জন্য এত কষ্ট এত ত্যাগ করছো তোমার এ ঋন তো আমরা কখোনই শোধ করতে পারব না। মা বলেছিলে তোরা একদিন বড় হবি উপার্জন করবি সেদিন আমার সব ঋন শোধ হয়ে যাবে। আসলে কি মায়ের ঋন শোধ হয় কখোনও? মা আরো বলেছিলেন যেদিন তোরা মানুষের মতো মানুষ হবি সেদিন আমার কষ্ট পুরোবে আমি শান্তি পাবো। আসলেই কি মায়ের চাওয়া পুরণ করতে পেরেছি। সে প্রশ্নের জবাব আজও আমার কাছে নেই। পরিবারের বড় সন্তান হিসাবে পরিবারের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি সেটাও আমার বোধগম্য নয়। বাবার মৃত্যুর প্রথম ঈদে আমরা দুই ভাই চাচাদের সাথে ঈদগাহ ময়দানে গিয়েছিলাম নামাজ পড়তে। প্রত্যেক বাবাই তার সন্তানদের নিয়ে আসছেন ঈদের নামাজ পড়তে অথচ আমাদের বাবা নেই। সেখানে তার অভাবটা বুঝতে পারলাম।বাড়িতে এসে মা’কে করুন কন্ঠে বলেছিলাম মা সবাই তার বাবার সাথে ঈদগাহ ময়দানে নামাজ পড়তে গেছে আর আমরা একা গেছি। পরবর্তীতে ঈদের দিন মা আমাদের সাথে নিয়ে যেতেন ঈদগাহ ময়দানে। ঈদগাহ ময়দানের দুরে কোন গাছের আড়ালে দাড়িয়ে থাকতেন যেখান থেকে আমাদের দেখা যায়। আমরাও বার বার তাকিয়ে দেখতাম মা দাড়িয়ে আছে। নামাজ শেষে আবার আমাদের সাথে করে নিয়ে আসতেন। সেখান থেকে আর কোনদিন ঈদের দিনের কষ্টটা আর অনুভব হয়নি। আমাদের জন্য তার যে ত্যাগ সেটা হয় তো এখন বুঝি। আমার প্রথম উর্পাযনের টাকাটা মার হাতে নিয়ে দিয়েছিলাম। সেই টাকাটা আজও আছে মায়ের কাছে স্বযত্নে। একদিন প্রশ্ন করেছিলাম “মা” টাকাটা খরচ করলে না। মা বলেছিলেন এটা তোমার প্রথম উপার্জনের টাকা। আমি যতদিন বেঁচে থাকব এই টাকাটা এভাবেই থাকবে। যখোন আমি থাকবনা তখোন টাকাগুলো খরচ করবে। এরকম আরো অনেক কথা আছে যা লিখতে পারলাম না। আসলে মায়ের গল্প লিখে শেষ করার মতো নয়। যতোই লিখবো ততোই বাকি থাকবে। এখন আমরা উপার্জন করি। মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার মুখে হাসিটা কি সত্যি ফোটাতে পারছি কিনা সেটাও বুঝতে পারি না। তবে “মা” কখোনই তার সন্তানদের দ্বারা কষ্ট পেলে সেটা বুঝতে দেননা। “মা” এমনই হাজার কষ্টের মাঝে থাকলেও তার বহিঃপ্রকাশে করেন না। মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসার কমতি নেই। বিশ্ব মা দিবসে সকল মায়ের প্রতি অঘাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। শুধু মাত্র একটা দিনেই নয় প্রতিটি দিনই হোক মা দিবস। লেখক:- মেহের মামুন প্রধান নির্বাহী মুকসুদপুর সংবাদ, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি বিডিফিন্যান্সিয়াল নিউজ ২4 ডট কম ইমেইল:–mehermamun93@gmail.com

Share