হবিগঞ্জে ছয় জনসহ সারাদেশে বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বজ্রাঘাতে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ জেলায় বজ্রাঘাতে ৬ ধান কাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর থেকে হবিগঞ্জ জেলায় ভারি বর্ষণ ও বজ্রপাত হয়। এ সময় বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি হাওরে দুই ধানকাটা শ্রমিক, নবীগঞ্জ হাওরে দুই ধান কাটা শ্রমিক এবং লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া হাওরে এক ধানকাটা শ্রমিক ও মাধবপুর হাওরে ১ জন মারা যায়।
নিহতরা হলেন, জেলার বানিয়াচং উপজেলায় দাইপুর গ্রামের বাসন্ত দাশের ছেলে স্বপন দাশ (৩৫), সিরাজগঞ্জ জেলার দত্তকান্দি গ্রামের জয়নাল উদ্দিন (৬০), লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের তাহির মিয়ার ছেলে সুফি মিয়া (৫৫), মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের রায় কুমার সরকারের ছেলে জহুর লাল সরকার (১৮), নবীগঞ্জ উপজেলার বৈলাকপুর গ্রামের হরিচরণ পালের ছেলে নারায়ণ পাল (৪০), মায়াকান্দি গ্রামের হাবিব উল্লার ছেলে আবু তালিব (২০)।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার জানান, বজ্রাঘাতে বানিয়াচং উপজেলায় বিকেলে পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুজনই ধানকাটা শ্রমিক।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আতাউর রহমান জানান, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বজ্রাঘাতে দুইজনের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জে পৃথক ঘটনায় বজ্রাঘাতে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন ধান কাটার শ্রমিক,একজন স্কুল ছাত্র ও দুই জন কৃষক রয়েছেন।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বজ্রাঘাতে সাইফুল ইসলাম অন্তর (১২) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সে তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সে তালুকনগর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান জানান, ‘বুধবার বেলা পৌনে ২টার দিকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মধ্যহ্ন বিরতিতে ওই বিদ্যালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে চানাচুর-বিস্কুট খাচ্ছিল। এময় বজ্রঘাতে বিভিন্ন শ্রেণির ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় গুরুর সাইফুল ইসলাম অন্তরকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। আহত অন্যদের দ্রুত দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা এলাকার হাসাদিয়া গ্রামে ইয়াকুব আলী শেখ (৪৮) নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়।
তিনি ওই গ্রামের মৃত হাফেজ শেখের ছেলে। বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের পরিবারে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, বুধবার সকাল ৯টার দিকে ইয়াকুব আলী ধান ক্ষেতে কাজ করতে যান। এ সময় বজ্রাঘাতে তিনি গুরুতর আহত হলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মারা গেছেন। নিহত দুই কৃষক উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মো.তারুন (৫৫) এবং মো. সেলিম (৩২) ।
বরাইদ ইউনিয়নের ৮ নং ওর্য়াড সদস্য মো. বোরহান উদ্দিন জানান, বুধবার দুপুরে গ্রামের কৃষি মাঠে গবাধি পশুর ঘাস কাটতে গিয়ে তারুন ও নাসিম বজ্রাঘাতে নিহত হয়।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নে বজ্রাঘাতে শাজালাল মিয়া (২৭) নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে হাওর থেকে কাটা ধান ট্রাক্টরে করে বাড়িতে নিয়ে আসার সময় বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়। তিনি করিমগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র এবং ছাতিরচর গ্রামের মাইন উদ্দিন মিয়ার ছেলে।
ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়ায় শাহজালাল তার বাবাকে কৃষি কাজে সাহায্য করার জন্য বাড়িতে এসেছিল।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির উদ্দিন ভুইয়া বজ্রাঘাতে ছাত্রের মৃত্যু হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী: রাজশাহীর তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম জানান, বুধবার সকালে বজ্রাঘাতে দু’জন নিহত হয়েছেন। উপজেলার ধুবইল মাঠের গভীর নলকূপ অপারেটর সোহাগ (১৮) ও বাতাসপুর বিলে ধান কাটার সময় আনসার আলী (৩২) বজ্রাঘাতে নিহত হয়। এদিকে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের চকরতিরাম আদিবাসী গ্রামের বেলাম হেমরমের স্ত্রী এলেনা মুরমু (৩৫) জমিতে বোরো ধান কাটতে গিয়ে সকালে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বজ্রাঘাতে মহর আলী (৩৫) নামে এক ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের পূর্ব ছালুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মহর আলী উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, সকালে মহর আলীসহ কয়েকজন শ্রমিক বাড়ির পাশে জমিতে ধান কাটছিল। এ সময় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হলে অন্য শ্রমিকরা দ্রুত পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তখন পিছনে থাকা মহর আলীর বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়। ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মহর আলীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উদাখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে মহর আলীর লাশ উদ্ধার করেছে পরিবারের লোকজন।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বজ্রাঘতে কুলফি আক্তার নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার মহজমপুর তিলাবো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কুলফি আক্তার শাহ কামালের মেয়ে এবং বাসাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বিষয়টি সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোরশেদ আলম নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী জানান, বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশে একটি জায়গায় কুলফিসহ তিন শিশু খেলা করছিল। আকাশে বৃষ্টির ভাব দেখে দুই শিশু বাড়ি ফিরে যায়। কুলফি সেখানে বসেই খেলা করছিল। দুপুরের দিকে বজ্রপাত শুরু হলে কুলফি আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নীলফামারী: নীলফামারীতে বজ্রাঘাতে পৃথকভাবে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। বুধবার সকালে জেলার জলঢাকা ডিমলা উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহতরা হলেন, জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালনগ্রামের মৃত ইসলাম হোসেনের স্ত্রী আসমা বেগম (৪৫) ও একই উপজেলার কাঁঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশিবাই গ্রামের মৃত সদর উদ্দিনের ছেলে কৃষক নূর আমিন (৪৩)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল আটটার দিকে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির সময় বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আসমা বেগমের মৃত্যু হয়। এছাড়া উঠানে ধান উঠানোর সময় বজ্রপাতে নিহত হন উত্তর দেশিবাই গ্রামের কৃষক নূর আমিন।
এদিকে, ডিমলা উপজেলার পুর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেরশ্বর গ্রামে বজ্রাঘাতে পাঁচটি গাভীর মৃত্যু হয়।
কুমিল্লা: কুমিল্লায় বজ্রপাতের ঘটনায় সেলিম (১৭) ও ইমন (১৫) নামে ২ কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকালে জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সেলিম যাত্রাপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার পুত্র এবং ইমন একই গ্রামের আবদুল হামিদের পুত্র।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মনজুর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বুধবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে মুরাদনগরের যাত্রাপুর এলাকায় বৃষ্টির সময় জমি থেকে ধান কেটে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে সেলিম ও ইমন মারা যায়।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে বজ্রপাতের ঘটনায় সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও শাকিল মিয়া (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র আহত হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি চরে ও সকাল ১১টার দিকে খাস রাজবাড়ি চরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সমতুল্লাহ পানাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও আহত শাকিল খাস রাজবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পানাগাড়িতে চরে নিজের ক্ষেতে কাজ করছিলেন কৃষক সমতুল্লাহ। এ সময় বজ্রপাত হওয়ায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। অপরদিকে সকাল ১১টার দিকে খাসরাজবাড়ি হাইস্কুলে যাবার পথে বজ্রপাতে ঝলসে যায় স্কুলছাত্র শাকিল। তাকে উদ্ধার করে কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলায় বজ্রাঘাতে আলমগীর হোসেন (২৫) ও কৃষক উজ্জল মিয়া (১৫) নামে ২ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বজ্রাঘাতে দুই জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত আলমগীর শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মুক্তমিয়ার ছেলে এবং উজ্জল মিয়া (১৫) উপজেলার দূর্বাকান্দা গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুর ১টার দিকে শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মাচতুলী হাওর থেকে ট্রলি দিয়ে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
অপরদিকে ধর্মপাশা উপজেলার কাইলনির হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে উজ্জল মিয়াও (১৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
জামালপুর: জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় হাবিবুর রহমান (৪৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মেম্বার জয়নুল আবেদীন জানান, সকালে হাবিবুর রহমান বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশে ধান ক্ষেত দেখতে যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। পরে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় সানন্দবাড়ী এলাকায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া মেলান্দহ উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার পত্তন গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম (৩০) নামে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এঘটনায় আজাদ নামে তার অপর এক সহকারী আহত হয়েছে। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে এঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুলের বাড়ী কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর থানার ওসি আলী আরশাদ জানান, নিহতরা আখাউড়া পল্লী বিদ্যুত অফিসের কর্মী। আজ বিকালে তারা বিজয়নগর উপজেলার পত্তন এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ এর খুঁটিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই সাইফুল ইসলাম প্রাণ হারায়। হতাহতদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।