আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) দিল্লি ও মুম্বাই শাখার বিরুদ্ধে কর অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় আয়কর দপ্তর। দুই কার্যালয়ে চালানোর তিন দিন পর শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছে দপ্তর।
আয়কর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই ‘নীরিক্ষা’ চালনোর সময় ওই দুই শাখার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়েছিল। সেসব নথি পর্যালোচনার মাধ্যমেই এই ব্যাপারটি জানা গেছে।
বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘আমাদের পর্যালোচনা বলছে, আয়কর ও তথ্য স্থানান্তর— উভয়ক্ষেত্রেই বড় ধরনের অনিয়ম ঘটেছে। বিবিসির ভারত শাখা কখনও নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করেনি। তবে তাদের নথিপত্র ঘেঁটে আমরা এসব অনিয়মের বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছি।’
২০০২ সালের বহুল আলোচিত গুজরাট দাঙ্গায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে বিবিসি। তার এক সপ্তাহ পর, ২৪ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় সেই তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় পর্ব।
তথ্যচিত্রটিতে প্রধানত দেখানো হয়েছে, কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এমন অনেক কথাই অবশ্য ছবিটিতে বলা হয়েছে, যা নতুন নয়; কিন্তু যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এক জায়গায় এনে বিবিসি একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। আর তত্ত্বটি হলো, গুজরাট দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।
এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ভারতের বিচারব্যবস্থা তাঁকে সাহায্য করেছে, তা ও দেখানো হয়েছে দুই খণ্ডের সেই তথ্যচিত্রে।
তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভারতের রাজনীতি। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে সেটি প্রদর্শন করার সময় পুলিশি ধরপাকড় ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে।
চলমান এই বিতর্কের মধ্যেই গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার সকালে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই শাখায় তল্লাশি চালান ভারতের আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় দুই কার্যালয়ের ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র, ল্যাপটপ ও সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন জব্দ করে নেন কর্মকর্তারা।
তল্লাশি উভয় কার্যালয় সিলগালা করে দেওয়া হয়। বিবিসি দিল্লি ও মুম্বাই শাখার সংবাদকর্মীদেরকে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বিবিসির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কর ও তথ্য স্থানান্তর মূল্যে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে; এ কারণেই বিবিসি কার্যালয়ে এসেছে আয়কর দপ্তর। অভিযানের সময় সাংবাদিকরা যেন নিজেদের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ না করেন, সেই নির্দেশও দেন তারা।
তবে আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি ছিল রুটিন নিরীক্ষা, তল্লাশি নয়।
মঙ্গলবার বিবিসির সদর দপ্তর লন্ডন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছিল, ভারতের আয়কর দপ্তরের এই নিরীক্ষায় বিবিসির তরফ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হবে। তবে শুক্রবার আয়কর দপ্তরের বিবৃতির কোনো জবাব এখন পর্যন্ত দেয়নি ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন।