নিজস্ব প্রতিবেদক : আইনজীবীদের ভুলে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে-আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এই বক্তব্যকে চক্রান্তের অংশ হিসেবেই দেখছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনি পরামর্শদাতারা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী জয়নুল আবেদিন বলেছেন, বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে সরকারপক্ষ। তাদের কোনো ভুল নেই, এ নিয়ে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝিও নেই।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালাচনায় জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘সরকার থেকে যে কথা বলা হচ্ছে, এটা তাদের মায়াকান্না। তাদের মায়াকান্না আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে তারা কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।’
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির সভাপতি জয়নাল নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার দিন থেকেই কারাগারে খালেদা জিয়া। তার রায়ের অনুলিপি মিলেছে ১১ দিনে। আর বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় করা জামিন আবেদনে ২২ ফেব্রুয়ারি সাড়া না দিয়ে রায়ের নথিপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে হাইকোর্ট বেঞ্চ।
বিচারিক আদালতের রায়ের অনুলিপি পেতে বিলম্বের সময় সরকারকে অভিযুক্ত করে বিএনপির আইনজীবীদের বক্তব্যের সময় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একে আইনজীবীদের ভুল হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। তার মতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সঙ্গে সঙ্গে রায়ের অনুলিপির জন্য আবেদন না করে চার দিন পর টাকা জমা দিয়েছেন।
সোমবার রাতে জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে আইনজীবীদের ওপর আপনি নির্ভর করেছেন, তারা থাকলে আপনাকে আর জেল থেকে বের হতে হবে না।’
মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনায় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের আইনজীবীদের ভুলের কারণে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইনি প্রক্রিয়ায় না লড়ে বরং সরকারকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন।’
এর জবাবে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদিন বলেন, মন্ত্রীরা তিনটি উদ্দেশ্যে এসব বক্তব্য দিচ্ছেন।
‘প্রথম উদ্দেশ্য হলো:বেগম খালেদা জিয়া যাতে করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হতে না পারেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে: আইনজীবীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এবং শেষটি হলো: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সম্পর্কে মানুষের যাতে একটি বিষোদগার সৃষ্টি হয়।’
এই মামলায় বিএনপির আইনজীবীদের কোনো ভুল ছিল না দাবি করে জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘নিয়ম মোতাবেক রায়ের কপি পাওয়ার আবেদন করেছিলাম। যে মোতাবেক কপি পাওয়ার কথা। আদালত প্রাথমিক অবস্থায় সে মোতাবেক কপি দিতে বিলম্ব করেছে।’
দক্ষতার সঙ্গে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে দাবি করে জয়নুল বলেন, ‘আমরা নিয়ম মোতাবেক হাইকোর্টে যে রুলস আছে, সে মোতাবেক আমরা জ্যেষ্ঠ আদালতে প্রাথমিকভাবে শুনানির জন্য আবেদন করেছি।’
‘আমাদের আবেদন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার তালিকায় ছিল। এবং সেই মোতাবেক আমরা শুনানি করেছি। পর দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে জামিনের শুনানি রবিবার দিন ঠিক করা হয়।’
২৫ ফেব্রুয়ারি জামিন আবেদনের শুনানির কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, ‘জামিন শুনানিতে দুদক এবং সরকারপক্ষের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা কিছু রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেছেন, যেটা আমরা আশা করিনি।’
জয়নুল আবেদিন বলেন, আইনের শাসনের থাকতে এবং দেশের স্বার্থ ও খালেদা জিয়ার জামিনের কথা চিন্তা করে সেখানে জ্যেষ্ঠ অনেক আইনজীবী থাকা সত্ত্বেও তারা কথা বলেননি।
‘আমরা সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের কোন প্রতিবাদ করি নাই? এর দুটি উদ্দেশ্য। এ মামলা নিয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এবং আদালতকে তারা যাতে বিভ্রান্ত করে না করতে পারে।’
জয়নুল বলেন, ‘এ নিরবতার মানে এই নয় যে, আমাদের আইনজীবীরা আইন সম্পর্কে সচেতন নয় বা আইন সম্পর্কে তারা জ্ঞাত নয়।’
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে জয়নুল বলেন, ‘এ জে মোহাম্মদ আলী একজন সিনিয়র আইনজীবী, ওনার চাইতেও সিনিয়র। আরও সিনিয়র আছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ আইনজীবীরা ট্রায়াল কোর্ট থেকেই এ মামলার সঙ্গে জড়িত। তারা ভুল করবেন?’
বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে কোনো ভুল বুঝাবুঝি নাই দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ, সমন্বয় করেই সমস্ত কাজ করছি।’
সরকার খালেদা জিয়াকে সহসাই মুক্ত হতে দেবে না এবং এটা সরকারের দূরভিসন্ধি বলেও মনে করেন বিএনপি নেত্রীর আইনজীবী। বলেন, ‘তার কারণ দেশের মানুষ মনে করে খালেদা জিয়া সবচাইতে জনপ্রিয়। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার তিনিই একমাত্র নেত্রী।’
বিচারিক আদালতের নথি দেখে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে হাইকোর্ট। এই নথি আসার বিষয়ে কিছু জেনেছেন কি না-এমন প্রশ্নে জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আমরা নথি আসার অপেক্ষায় রয়েছি।’