স্পোর্টস ডেস্ক: ফুটবল বিশ্বকাপ, যেকোনো ফুটবলারের জন্য আরাধনার। এর জন্য যেকোনো কিছু ছাড় দিতে তৈরি থাকেন খেলোয়াড়েরা। এমনকি এই এক মাসের মতো সময় অনেকে বিরত থাকেন নিজের যৌনজীবন থেকেও। অনেককে তা করতে বাধ্যও করা হয়। টুর্নামেন্ট চলাকালীন বান্ধবী-স্ত্রীদের কাছে ঘেঁষতে পারছেন না অনেক দলের খেলোয়াড়েরা। যাদের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানির মতো বড় দলও। আর যাঁদের প্রেমিকা বা স্ত্রী নেই; তাঁরাও যে রুশ-নন্দিনী কাউকে ‘চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’র গান শোনাবেন, সেই সুযোগও তেমন নেই। বেশির ভাগ কোচ তাঁদের খেলোয়াড়দের সতর্ক করে দিয়েছেন, খেলতে এসে কেউ যেন রুশ নারীদের সঙ্গে প্রেমে মশগুল না হয়ে যান!
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো গতবার ছাড় দিলেও এবার খুব কড়া। বিশ্বকাপে যত দিন জার্মানি টিকে থাকবে, তত দিন খেলোয়াড়েরা তাঁদের বান্ধবী ও স্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন না। প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া জার্মানির জন্য এই উপায় কতটা কাজ করছে, সেটি সন্দেহের বিষয়। গতকাল তো আরেকটু হলেই ফসকে যেতে বসেছিল জার্মানি, পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই।
আর্জেন্টিনার ফেডারেশন শুধু খেলোয়াড় নয়, তাদের সমর্থকদের জন্যও রীতিমতো যৌন নির্দেশিকা বানিয়ে রেখেছিল। কীভাবে রাশিয়ান মেয়েদের সঙ্গে মিশতে হবে, পটাতে হবে—এসবও ছিল তাতে। পরে বিতর্কের মুখে এর জন্য ক্ষমাও চাইতে হয়েছিল তাদের। তবে স্ত্রীদের সঙ্গে থাকা হচ্ছে না মেসিদের। মেসির রুমমেটের নাম? সার্জিও আগুয়েরো!
এদিক দিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের নিষেধ করেও বোধ হয় খুব একটা লাভ হতো না। ব্রাজিলিয়ানদের ভালোবাসাবাসি থেকে থামানোর উপায় নেই। বরং কিংবদন্তি রোমারিও উত্তরসূরি গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে সফল হওয়ার টিপস দিয়ে রেখেছেন এই বলে, ‘যত পারো উপভোগ কোরো।’
আইসল্যান্ড কোচ হেইমির হলগ্রিমসন খেলোয়াড়দের এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে প্রশ্নের উত্তরে ‘না’ বলেছেন। আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা খেলছেনও দারুণ। আর নাইজেরিয়ান কোচ গার্নট রোর বলেছেন, ‘খেলোয়াড়েরা অবশ্যই ম্যাচের আগে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবে। প্রত্যেকে আলাদা কক্ষও পাবে। কিন্তু রাশিয়ান মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা? না, না, না।’
নাইজেরিয়ান অধিনায়ক জন অবি মিকেল এ নিষেধাজ্ঞার ভেতর পড়েন না। মিকেলের দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী যে রাশিয়ান। তাই মিকেলও কোচের কাছ থেকে ‘বিশেষ অনুমতি’ পেয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ফেডারেশন এ ব্যাপারে ভীষণ কঠোর। তাদের সাফ কথা, ‘যত দিন না নিয়মিত নক-আউট পর্বে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করতে পারছ, তত দিন বান্ধবী-স্ত্রীদের কথা ভুলে যাও। বিশ্বকাপে এসব চলবে না বাপু!’
বান্ধবী-স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা যে সব সময় নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচক ফল বয়ে আনে, সেটির উদাহরণ কোস্টারিকা। ২০১৪ বিশ্বকাপ চলাকালীন কোস্টারিকার খেলোয়াড়দের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। এ সময় তাঁরা যৌন সংসর্গ করবেন কি না, সেটি তাঁদের ব্যাপার। কে কতটুকু এ সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন, তা তো আর বলার উপায় নেই; ব্যাপারটি শোভনীয়ও নয়। তবে এমন স্বাধীনতা কোস্টারিকাকে ইতিবাচক ফল এনে দিয়েছিল। ইংল্যান্ড, ইতালি, উরুগুয়ের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের গ্রুপে পড়েও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কোস্টারিকা।
এবারের বিশ্বকাপে ৩২টি দলের মধ্যে ২০টি দলের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনার খোঁজ পাওয়া গেছে:
জার্মানি: যৌনমিলন, পানাহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ
নাইজেরিয়া: বান্ধবী কিংবা স্ত্রী থাকলে তাঁরা দেখা করতে পারবেন, কিন্তু কোনো রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে চলাফেরা করা যাবে না
আইসল্যান্ড: যৌনমিলন নিষিদ্ধ নয়, তবে কেবল দীর্ঘদিনের সঙ্গী হলেই দেখা করা যাবে
বেলজিয়াম: খেলোয়াড়েরা সঙ্গিনীর সঙ্গে পুরো বিশ্বকাপে দুই রাত কাটানোর সুযোগ পাবেন
পানামা: যৌনমিলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
পর্তুগাল: দলের গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিওর যৌন বিশেষজ্ঞ স্ত্রীর মতে, নিষেধাজ্ঞা জারি করাটা বোকামি। ফলে বুঝতেই পারছেন
ইংল্যান্ড: সঙ্গিনীরা দলের হোটেল থেকে ৩০ মিনিট দূরত্বের বাসস্থানে থাকার সুযোগ পাবেন
উরুগুয়ে: ২০১৪ বিশ্বকাপে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও এবার কোচ অস্কার তাবারেজ কঠোর
কোস্টারিকা: ২০১৪ বিশ্বকাপের সাফল্যের প্রতিদান হিসেবে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই
দক্ষিণ কোরিয়া: ফলাফলে উন্নতি হওয়া না পর্যন্ত সঙ্গিনীর সঙ্গে দেখা করা যাবে না
স্পেন: ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা নেই, খেলোয়াড়দের ইচ্ছা অনুযায়ী
ব্রাজিল: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সঙ্গিনীরা দেখা করার সুযোগ পাবেন
আর্জেন্টিনা: খেলোয়াড়দের ব্যাপারে নির্দেশনা কী, জানা যায়নি। যা অবস্থা চলছে, এসব নিশ্চয়ই মাথায় উঠেছে।
মেক্সিকো: বিশ্বকাপ শুরুর আগে কয়েকজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বকাপ চলার সময় পুরো নিষেধাজ্ঞা জারি
পোল্যান্ড: খেলোয়াড়েরা মাঝেমধ্যে কেবল ফোনের মাধ্যমে সঙ্গিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন
ডেনমার্ক: খেলোয়াড়েরা পূর্ণ স্বাধীন। পরিবার এবং সঙ্গিনী—সব সময় আমন্ত্রিত
অস্ট্রেলিয়া: শুধু সাদর আমন্ত্রণই নয়, দলের অনুশীলনেও থাকতে পারবে খেলোয়াড়দের পরিবার
সুইডেন: প্রথম ম্যাচের আগে খেলোয়াড়েরা পরিবার এবং সঙ্গিনীর সঙ্গেই ছিলেন
রাশিয়া: ২০১৪ বিশ্বকাপে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এবার সেটি শিথিল করা হয়েছে