Current Date:Oct 4, 2024

ব্যবসাবান্ধব নির্বাচনমুখী বিশাল বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট : সামনেই জাতীয় নির্বাচন। এমন সময়ে কোনো সরকারই বাজেটে জনগণকে নাখোশ করতে চান না। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তা করবেন না বলে আভাস দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে খুশি রাখতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় ও প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে আসছে বাজেটে। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রী তার শেষ বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি করে কিছুটা ছাড় দেবেন। বহুল আলোচিত করপোরেট করও কমাবেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর ছাড় ও প্রণোদনা থাকবে। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বেশ কিছু পণ্যের কাঁচামালের শুল্ক্কহারও কমানো হচ্ছে। উৎসাহিত করা হবে পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ি আমদানির। বর্তমান ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন সংশোধন করে অনলাইনের আওতায় আনার প্রস্তাব থাকছে। ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে উন্নতমানের ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বাড়ানো হতে পারে দেশীয় তৈরি কিছু পণ্যের ট্যারিফ। এ ছাড়া সেবা খাতের ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া সহজ হবে। এ লক্ষ্যে ‘সংকুচিত ভিত্তিমূল্যের’ একাধিক স্তর সহজীকরণের প্রস্তাব থাকবে। এবারও নতুন শুল্ক্ক আইন কার্যকরের ঘোষণা থাকছে না বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

ব্যবসাবান্ধব নির্বাচনমুখী বিশাল বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে কর ছাড়, আওতা বৃদ্ধি এবং কিছু ক্ষেত্রে কর কাঠামো ‘যৌক্তিকীকরণ’ করে এনবিআরের মাধ্যমে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আমদানি শুল্ক্ক থেকে মোট ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসবে অভ্যন্তরীণ আয়ের অন্যতম উৎস ভ্যাট থেকে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আয়কর থেকে ১ লাখ ২০০ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক্ক থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এবার রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৩১ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয় ৩৬ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশে রাজস্ব আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। উল্লেখ্য, চলিত অর্থবছরে এনবিআরের আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হবে। এটি হবে অর্থমন্ত্রীর টানা দশম বাজেট। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে নতুন বাজেটে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না যাতে জনগণ অসন্তুষ্ট হয়। অবশ্য অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে বলেছেন, এবার তিনি নতুন কোনো কর আরোপ করবেন না।

বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণি বার্ষিক করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা। এর বেশি আয় হলে বাংলাদেশি যে কোনো নাগরিককে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়। অবশ্য এর সঙ্গে বাড়িভাড়া, যাতায়াত এবং চিকিৎসা ভাতা হিসেবে রেয়াত সুবিধা পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি আয়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে বর্তমানের আড়াই লাখ টাকা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হতে পারে। তবে নূ্যনতম করের অঙ্ক আগের মতো বহাল থাকছে।

এখন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং এর বাইরে ব্যাংকসহ ননলিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ছয়টি স্তরে করপোরেট কর আদায় করা হয়। আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর কাঠামো সহজ করে তিন থেকে চারটি স্তরে করা হতে পারে। বর্তমানে ননলিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ। এটি ১ থেকে ২ শতাংশ কমানো হতে পারে।

বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বর্তমানে নির্ধারিত সীমার অঙ্কের বিপরীতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত দেওয়া হয়। যেমন- কেউ শেয়ারবাজার, সঞ্চয়পত্র, মেয়াদি আমানতসহ অন্যান্য সরকারি খাতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত পাওয়া যায়। এরকম সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা ও তার ওপরে বিনিয়োগে বিভিন্ন হারে রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়। আগামী বাজেটে এসব খাতে বিনিয়োগ করলে আরও বেশি রেয়াত দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া বর্তমানে ইপিজেডে বিনিয়োগ করলে পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত কর অবকাশ দেওয়া হয়। এসব স্থানে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব থাকতে পারে।

জানা যায়, আমদানি পর্যায়ে বর্তমানে পাঁচ স্তরে শুল্ক্ক কাঠামো আছে। আগামী বাজেটে বিদ্যমান কাঠামো একই থাকছে। বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক্ক বহাল রাখা হচ্ছে। তবে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ধরে রাখা এবং সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে অন্তত ৫০ আইটেমের শুল্ক্ক ও সম্পূরক শুল্ক্ক কমানোর প্রস্তাব থাকছে।

সূত্র জানায়, ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে আগামী বাজেটে ইসিআর মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১১টি খাতে এই মেশিন বসানো হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসিআর মেশিন আনা হবে। সরকার এ জন্য বেশক’টি প্রতিষ্ঠানকে ইসিআর মেশিন আনার অনুমতি দেবে।

এখন ভ্যাটে সেবার একুশটি খাত আছে। এসব খাতে বিশেষ ছাড় দিয়ে ‘হ্রাসকৃত’ হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। বর্তমানে দশটি হারে এসব খাত থেকে ভ্যাট আদায় হয়। ভ্যাটের হার সর্বনিম্ন দেড় এবং সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে এসব খাতে ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া সহজ করে ছয় থেকে সাতটি স্তর করা হতে পারে। এ ছাড়া বহুল আলোচিত প্যাকেজ ভ্যাট বহাল থাকছে। তবে কোনো রেট পরিবর্তন হবে না।

Share