ডেস্ক রিপোর্ট : সারাদেশে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। এই অভিযান আরও গতিশীল করতে মাদকের গডফাদারদের কালোটাকার খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নামে-বেনামে রাখা তাদের অবৈধ সম্পদ খুঁজতে শুরু করেছে সংস্থাটি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া সাড়ে তিনশ গডফাদারের তালিকা ধরে কাজ শুরু করেছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, সাধারণভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। কিন্তু যেকোনো নাগরিকের সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারে সংস্থাটি। তাই সে অস্ত্রটিকেই কাজে লাগাচ্ছে তারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে মাদকের গডফাদারদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের অবৈধ আয়ের পথ ও বিশাল অর্থবিত্তের খোঁজে কাজ শুরু করেছে দুদক। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছ থেকে দুদকের কাছে অনুরোধ এসেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। দুদক সচিব মো. শামসুল আরেফিন বলেন, তালিকাভুক্ত
মাদক ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব রীতিমতো মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সেøাগান তুলেছে, ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’। র্যাবের এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও মাদক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা মাদক ব্যবসা করছে এবং ইতোপূর্বে যেসব মাদক কারবারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১০ দিনে মারা গেছে প্রায় অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে এদের বেশিরভাগই খুচরা ব্যবসায়ী। গডফাদাররা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যে তালিকা রয়েছে, সেখানে শীর্ষে আছে কক্সবাজারের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নাম। একাধিক সংস্থার করা তালিকায় সরকারদলীয় এ এমপির নাম থাকলেও তার বিরুদ্ধে প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বদির বিরুদ্ধে তথ্য থাকলেও প্রমাণ নেই। দুদকের হাতে যে তালিকা আছে সেখানেও বদির নাম ওপরের দিকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তালিকায় আবদুর রহমান বদিকে ‘মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি’ বলা হয়েছে। এতে বদির সঙ্গে তার পাঁচ ভাইয়ের নামও উঠে এসেছে। দুদক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ১৪১ এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ১১০ জন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা সংগ্রহ করেছে। দুদকের কাছেও সরাসরি এসেছে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম। সব মিলে সংস্থাটির কাছে সাড়ে তিনশ মাদক নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। দেশজুড়ে থাকা এসব মাদক ব্যবসায়ী এই অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তালিকা ধরে সংস্থাটি কাজ শুরু করেছে এ বছরের প্রথম থেকেই।
Share