অনলাইন ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধানমন্ত্রী আসলে কথা দিয়ে কথা রাখে নাই- এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, একথা বাংলাদেশের মানুষ এবং আমাদের প্রজন্ম তারা এটাকে মনে রাখবে, যে বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রাখেন নাই। এখন যেই কথা দিয়ে তিনি সরে যেতে চাইছেন সেই কথা মোটেও টেকসই নয়। যদি আপনারা সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রীর কথায় কোটা প্রত্যাহার করে নিতে চান আর যদি বাধা থাকে হাইকোর্টে, তাহলে সেই বাধা আপনারা অবশ্যই দূর করতে পারেন।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সরকারের নিয়ত যদি ঠিক থাকতো তাহলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় এমেন্ড (সংশোধন) করতো উল্লেখ্য করে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের নাকি একটা রায় আছে- মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন। আমি যতদূর জানি হাইকোর্টে এ বিষয়ে কোনও রায় আছে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও হাইকোর্টের যদি এ ধরনের কোনও রায় থাকে সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ব্যাপারে আছে। নাতি-নাতনিদের ব্যাপারে আছে বলে আমি মনে করি না। তারপরও বলবো প্রধানমন্ত্রী নিজের কথা রক্ষা করার জন্য, তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য সরকারই তো হাইকোর্টে গিয়ে সেটাকে এমেন্ড (সংশোধন) করতে পারে। যদি সরকার মনে করে হাইকোর্টের রায় হলো একমাত্র বাধা, আর তাদের যদি প্রতিশ্রুতি পালন করতে এখনও রাজি থাকেন তাহলে রবিবার দিন সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল একটু কষ্ট করে যান এবং সোমবারে বিষয়টি লিস্টে আনেন তাহলে যদি রায়টাকে সংশোধন করে নেন বা রিভিউ করে নেন। কতো ধরনের পথ আছে। যদি নিয়ত ঠিক থাকে তাহলে এটাই করতেন।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অত্যাচার-নিপীড়নের কথা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, ‘তিনজন কি নিরীহ ছেলে! রাশেদ ১০ দিনের রিমান্ডে। তার মা হাহাকার করছে যে, আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দেন। মা তো মা’ই, প্রধানমন্ত্রীও তো একজন মা। সুতরাং কেন এই অত্যাচার-নিপীড়ন। বরং কালকে বক্তৃতা শুনে একটু মর্মাহত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এদেরকে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এরা নাকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, আরেকজন তো বললেন এরা নাকি জঙ্গি। শোনেন, এটাই হলো ফ্যাসিবাদ। এই মন মানসিকতাই হলো ফ্যাসিবাদ।’
তিনি বলেন, ‘আজকে এতো বড় এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা নাই। এটা সরকার জানে। তারা চায় মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ হোক, তারা এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করে, তাদের পিতা-মাতারা বেশির ভাগই তো গরিব। জমি বিক্রি করে তাদেরকে লেখাপড়া করায়। তারা মেধাবী ছাত্র, তারা পরীক্ষায় পাস করে ফার্স্ট হয়। কিন্তু তারা কোটার জ্বালায় পড়ে তারা চাকরিটা পায় না। আজকে কতো বছর ধরে তারা এই ব্যথা বহন করছে। তার একটি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, এটা একটা স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ। এখানে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে কোনও বক্তব্য নাই। এটা হলো তাদের ন্যায্য কথা।’
কোটায় মেধাবীরা চাকরি পায় না এমন দাবি করে মওদুদ বলেন, ‘কোটার ব্যাপারে আমার নোয়াখালী সবচেয়ে বড় ভিকটিম। আমার জানা মতে ফার্স্ট হয়েছে কিন্তু কোটার কারণে চাকরি পায় নাই এরকম আছে। সেই ছেলের ভবিষ্যৎ কি? তার পরিবার এতো বছর যাবত কষ্ট করে জমি বিক্রি করে লেখাপড়া করায় কি লাভ হলো? সবাই কি আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ঢাকা শহরের? খবর নিয়ে দেখেন যারা একেবারে মেধাবী তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর যারা ধনী তারা তো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারে।’
আপনাদের কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না এমন ভাববেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে তরিকুলের পা এবং মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এই অপরাধের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্যই হবে। আজকে আপনারা ভাবতে পারেন আপনাদেরকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। কিন্তু এটা ভাববেন না। এইটা ভাববেন না এজন্য সকলের ওপরে একজন মহাবিচারক সবকিছু দেখছেন। রাজনীতি একটি গতিশীল বিষয়, যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা মনে করি দেশের মানুষ প্রস্তুত হয়ে গেছে মাঠে নামার জন্য। এখন আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে উপযুক্ত সময়ের জন্য।’
স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ’র সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এ জাহিদ, সেলিমা রহমান প্রমুখ।