Current Date:Oct 7, 2024

যুদ্ধ-সহিংসতায় বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত ৬ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ: জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ছয় কোটি ৮৫ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ লাখ বেশি।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসকে সামনে রেখে ‘বৈশ্বিক প্রবণতা: ২০১৭ সালে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার, সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদানের মতো দেশ থেকে লক্ষণীয় হারে মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রতিদিন গড়ে ৪৪ হাজার ৫০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ২ সেকেন্ডে বাস্তুচ্যুত হয়েছে একজন। এক দশক আগে বিশ্বজুড়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় চার কোটি ২৭ লাখ। এখন এটা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। এ সময় দেশটিতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় পেয়েছে ৬ লাখ ৮১ হাজার সিরিয়ান। ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ তুরস্কে অবস্থান করছে ৩৫ লাখ শরণার্থী। বাংলাদেশ আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এখানে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫শ’ রোহিঙ্গা। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং এদেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি অসাধারণ মহানুভবতা দেখিয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক নজর জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছর রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। মোট ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এ সময়ের মধ্যেই অর্ধেকের বেশি দেশ ছেড়েছে। শুধু বাংলাদেশেই এখন অবস্থান করছে ৯ লাখ ৩২ হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়া থাইল্যান্ডে ১ লাখ, মালয়েশিয়ায় ৯৮ হাজার এবং ভারতে ১৮ হাজার ১শ’ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

সাত বছরের যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালেও বিপুল সংখ্যক সিরীয় উদ্বাস্তু হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে দেশ ছেড়েছে ৬৩ লাখ সিরীয়। দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরও ৬২ লাখ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আফগানিস্তান। দেশটির উদ্বাস্তু নাগরিকের সংখ্যা এ সময় ৫ ভাগ বেড়েছে। দক্ষিণ সুদান থেকে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৪ লাখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল যখন স্বাধীনতার ৭০ বছরপূর্তি পালন করছে তখন ৫৪ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় শরণার্থী নিয়ে বেশি কথাবার্তা হলেও ৮৫ ভাগ শরণার্থীই বাস করছে তুরস্ক, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, লেবানন ও উগান্ডার মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি জেনেভায় প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় বলেন, স্বেচ্ছায় কেউ শরণার্থী হয় না। এ পর্যন্ত যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তার মধ্যে ১০ দেশের মানুষই ৭০ শতাংশ। যদি ওই ১০টি দেশ বা তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর অরাজকতার সমাধান করা যায়, তাহলে প্রতি বছরই লক্ষণীয়ভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা কমবে।

Share