ডেস্ক রিপোর্ট : রাজশাহীতে এখন আমের হাটবাজার পুরোদমে জমে উঠেছে। কয়েক দিন ধরে রাজশাহীতে বেশ গরম পড়ছে। সে কারণে দ্রুত পাকছে গাছের আম। বিভিন্ন প্রজাতির আম উঠছে বাজারে। জমজমাট এই ব্যবসা চলবে আরো মাসখানেক ধরে। বলতে গেলে এখন রাজশাহীতে শুধু আম আর আম। হাটবাজারগুলো আমে পরিপূর্ণ। তবে আমের কম দামে হতাশ আম চাষিরা।
রাজশাহীর সব চেয়ে বড় আমের হাট বসে জেলার পুঠিয়া উপজেলায়। বানেশ্বর ইউনিয়ন ভূমি অফিস প্রাঙ্গণের এই হাট এখন আমে ভরপুর। হাটের জায়গা ছাড়িয়ে আমভর্তি গাড়ি ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মহাসড়কের ধারে। সেখানেই চলছে দরদাম, বেচাকেনা। ট্রাকভর্তি হয়ে আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানভর্তি করে চাষিরা আম আনছেন সেখানে। কোনো কোনো ভ্যানে চারটি অথবা কোনো ভ্যানে তারও বেশি আমের ঝুড়ি সাজানো। বেশির ভাগ আমের আড়তদার আর পাইকারি ক্রেতারা ওজন না করে ঝুড়ি হিসাব করেই কিনছেন আম। তবে কেউ কেউ কিনছেন ওজন করে। তবে তখন ৪৬ কেজিতে ধরা হচ্ছে এক মণ। এভাবে আম কিনে হাটের আশপাশে থাকা নিজের আড়তে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারপর ট্রাকভর্তি হয়ে আম চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
হাটের অন্যপাশে খুচরা বিক্রিও করা হচ্ছে। একই হাটে পাইকারি আর খুচরা আমের দামের পার্থক্য মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আম কিনে দেশের নানা প্রান্তে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছে বহু মানুষ। আম কেনার পর হাটেই সেগুলো কার্টন অথবা ঝুড়িতে দেয়া হচ্ছে। এলাকার বহু মানুষ এই কাজ করছে। তারা ২০ কেজি ওজনের আম কার্টন করে দিচ্ছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। হাটের পাশেই প্রচণ্ড ভিড় বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসগুলোতে। হাট থেকে কার্টনে ভর্তি আম সেখানে যাচ্ছে ভ্যানে করে। তারপর কুরিয়ার সার্ভিস সেই আম নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
আমের হাটের ইজারাদাররা জানান, প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম কেনাবেচা হচ্ছে হাটে। বানেশ্বর বাজারে অবস্থিত সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে ¡ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে বেশ কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা আছে। তবে সবচেয়ে বেশি আম পাঠাচ্ছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ কার্টন আম পাঠাচ্ছে এই কুরিয়ার সার্ভিসটি। বেশির ভাগ আম যাচ্ছে ঢাকায়। সেখানে আম পাঠানো হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে ১৫ টাকা।
হাটের আম বিক্রেতারা জানান, কয়েক দিন ধরে আবহাওয়া উষ্ণ থাকায় গাছে আম পেকে যাচ্ছে। তাই হাটে এখন প্রচুর আম। কিন্তু রোজার কারণে আমের চাহিদা কিছুটা হলেও কম। এজন্য আমের দামও কম। তবে ঈদের পর আমের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন আমের দামও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। এখন হাটে প্রতি মণ গোপালভোগ পাইকারিতে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০, হিমসাগর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০, ল্যাংড়া ৯০০ থেকে এক হাজার এবং লখনৌ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নানা প্রজাতির গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে। বাজারে আমরুপালি ও ফজলি আম উঠবে ঈদের পর।
রাজশাহীতে গাছ থেকে আম নামানোর ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের মতো এবারো সময় বেঁধে দিয়েছিল প্রশাসন। বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী, গত ২০ মে থেকে গোপালভোগ প্রজাতির আম নামানো শুরু হয়। হিমসাগর ও লক্ষ্মণভোগ নামানো যাচ্ছে ১ জুন থেকে। আর ল্যাংড়া নামছে ৬ জুনের পর থেকে। আমরুপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা প্রজাতির আম ১ জুলাইয়ের আগে চাষিরা গাছ থেকে পাড়তে পারবে না।
সূত্র মতে, রাজশাহী জেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি। সেসব গাছ থেকে এবার দুই লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ টন আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম হওয়ায় আম উৎপাদনের এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলার আম চাষিরা ধারণা করছেন।