নিজস্ব প্রতিবেদক: সবুজ অর্থায়নে (গ্রীন ব্যাংকিং) দেশের সব ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। একইসঙ্গে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জনের গৌরব অর্জন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব মালিকানাধী এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটি। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমড) ও প্রধান নির্বাহী কমূকর্তা (সিইও) শামস্-উল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বত্র গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু কর্নারের শুরুটাও হয়েছিল এই বিশিষ্ট ব্যাংকারের হাতে।
তিনি বলেন ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে এটা করেছি। যখন আমি অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলাম তখন (২০১০ সালে) সেখানে বঙ্গবন্ধু কর্নার করার উদ্যোগ নেই। আজ সারা দেশ বিদেশে বঙ্গবন্ধুর কর্নার ছড়িয়ে পড়েছে। এটা শুনে খুব ভালো লাগে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলোচনা হয় অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তিনি বলেন, গ্রাহকদের আধুনিক সব ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। তিনি জানান, আগ্রণী ব্যাংকে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ডিপোজিট আছে। বর্তমানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ প্রায় ১২ শতাংশ আছে। আগামী বছর খেলাপি ঋন সিঙ্গেল ঘরে আসবে আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনার মধ্যেও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে গতি থাকলে বরাবরের মতোই ব্যাংকের মুনাফা হবে। গত দুই বছর করোনার কারনে মুনাফার কথা চিন্তা করিনি। তবে এখন করোনা অনেকটা কমে গেছে। তাই আগামী বছর ২০২২ সাল হবে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর।
সবুজ অর্থায়নে বিষয় তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। তাই আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। আর এ জন্য গ্রিন ব্যাংকিং বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্যই সবুজ অর্থায়নে আমরা বেশি মনোযোগ দিয়েছি। সামনে সবুজ অর্থায়ন আমরা আরও সম্প্রসারিত করবো।
অগ্রণী এমডি বলেন, আমরা শুধু মুনাফাই করব, দেশ ও জনগণের প্রতি কোনও দায়িত্ব পালন করবো না, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে এমনটা হওয়া উচিত নয়। তাই আমরা দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করাকেই প্রাধান্য দিই। এজন্য পদ্মা সেতু নির্মাণে শুরু থেকেই আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। প্রয়োজনীয় সকল বৈদেশিক মুদ্রা অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করছে। আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছি। পদ্মা সেতু নির্মাণে আরও যত বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে তা আমরা দিতে পারব। বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক যে পদ্মা সেতু, এর অংশীদার অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে পাশে দাঁড়িয়েছিল ব্যাংকটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তের কারণে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে। এই সেতু নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রা সরবারাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারপ্রধানের পাশে দাঁড়িয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সকল বৈদেশিক মুদ্রা রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটিই সরবরাহ করছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পে ১৪০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছে অগ্রণী। সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে মোট ২৪৩ কোটি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। বাকি প্রায় ১০৩ কোটি ডলারও অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করবে। জানা গেছে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের একটি চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও ডলার নিতে হয়নি। জানা গেছে, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা থেকেই পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করছে ব্যাংকটি।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার দিকে আমরা জোর দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মান উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছি। আগামী বছর হবে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর।
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ব্যাবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি সচল হচ্ছে শিল্প কারখানা। ফলে শিল্প খাতে ঋণের চাহিদা বাড়ছে। এটা আমাদের
জন্য ভালো। যতই ঋণের চাহিদা বাড়বে দেশের অর্থনীতি ততোই ভালো হবে। আমরা তো টাকা নিয়ে বসে আছি। যারা জেনুইন ঋণ চাচ্ছে আমরা তাদেরকে দিচ্ছি। আমাদের দরজা খোলা রাখছি। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি আরও বলেন, খুব দ্রুত সংকট কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। করোনার তৃতীয় বা চতুর্থ ধাক্কা আসলেও কোন ক্ষতি করতে পারবে না প্রত্যেকে লোক যদি ভ্যাকসিনের আওতায়ও নিয়ে হবে। আর ভ্যাকসিনটা দেওয়াটা খুব জরুরী যারা দেয় নাই তাদের দিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ২০১১ সালে গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে পরিবেশবান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। ধরিত্রীকে বাঁচানোর তাগাদা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে সবুজ অর্থায়নে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে অগ্রণী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবই বলছে, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সবুজ অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক। আর এ কারণে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটিকে শীর্ষ সবুজ অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে পুরস্কৃত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে অগ্রণী ব্যাংক সহ অনেক ব্যাংক এগিয়ে আসায় গ্রিন ব্যাংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ গ্রিন ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে রয়েছে।
Lead Newsঅর্থনীতি
সবুজ অর্থায়নে শীর্ষে অগ্রণী ব্যাংক : এমডি শামস্-উল ইসলাম
পিপল নিউস 24Nov 20, 202190
Share