Current Date:Nov 29, 2024

১০ লাখ মানুষের জন্য বিচারক ১০ জন : প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০ বিচারক রয়েছেন। এ কারণে মামলার জট দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আজ রোববার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি এক মিলিয়ন মানুষের জন্য ১০ বিচারক আছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে আছে ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়াতে ৪১ জন এবং ইন্ডিয়াতে ১৮ জন। পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে ৩০ মিলিয়ন মামলা বিচারাধীন এবং বিচারক প্রায় ২৩ হাজার। আমাদের দেশে ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন মামলার বিপরীতে বিচারকের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৬৪৭ জন। ইন্ডিয়াতে গড়ে একজন বিচারকের ওপর ১ হাজার ৩৫০টি মামলা বিচারাধীন এবং বছরে গড়ে ৫১৬টি মামলা নিষ্পত্তি করে।’

‘অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রত্যেক বিচারকের ঘাড়ে ২ হাজার ১২৫টি মামলা বিচারাধীন এবং বছরে গড়ে প্রায় ৭০০ মামলা নিষ্পত্তি করে। বিচারধীন মামলার আসামীর কারণে বাংলাদেশের কারাগারগুলোও জনাকীর্ণ।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়নে এবং বিদ্যমান মামলাজট নিরসনে ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। দেশের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই জানি। এর অনেক কারণ রয়েছে। যেগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা দরকার। ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট এই কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করবে এবং সরকারি নীতি প্রণয়ণে সহায়তা করবে।’

‘জাস্টিস অডিট’ হলো ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়নের একটি পদ্ধতিগত নিরীণ ও সমীক্ষা। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিদ্যমান বিচারব্যবস্থার প্রকৃত অবস্থাকে দৃশ্যমান করে।

‘জাস্টিস অডিট’ একটি ওয়েবভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার যা থেকে নীতিপ্রণেতাসহ বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষগুলো তথ্য ও প্রমাণনির্ভর বিশ্লেষণ দেখতে পান এবং এর ভিত্তিতে বিচারব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় বিচারব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

একই সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক জরিপের মাধ্যমে বিচার পারিসেবা প্রদানকারী, বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ জনগণের মতামত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তা লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।

‘জাস্টিস অডিট’ বছরভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে মামলাজটসহ ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে। এটি কোনো বিশেষ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, ক্ষেত্র বা বিশেষ কোনো ব্যবস্থাকে দায়ী করে না এবং কোনো প্রতিষ্ঠান, ভৌগোলিক স্থান কিংবা জেলাকে ক্রমানুসারে বিন্যাস বা স্কোরিং করে না।

‘জাস্টিস অডিট’ কোনো এককালীন ঘটনার প্রতিবেদনও নয় বরং বিদ্যমান প্রতিবদ্ধকতা কাটিয়ে ওঠার একটি চলমান কৌশল। ‘জাস্টিস অডিট’ কোনো ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা সরকারের কোনো গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করে না।

২০১৩ সালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আগ্রহে ব্রিটিশ ও জার্মান সরকারের পে জিআইজেড বাংলাদেশ দেশের পাঁচটি জেলায় পরিামূলকভাবে ‘জাস্টিস অডিট’ সম্পাদন করে। এতে কারিগরি সহায়তা দেয় ‘দি গভার্নেন্স এন্ড জাস্টিস গ্রুপ’ (জিজেজি) নামের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, যারা ইতিপূর্বে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে এই ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

২০১৬ সালের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে জাস্টিস অডিটের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানীর উপরাষ্ট্রদূত মিকায়েল এসচুলথেইস, যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডির বাংলাদেশ প্রধান জেন এডমনডসন, আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, জিআইজেডের ‘রুল অব ল’ বিভাগের বাংলদেশ প্রধান প্রমিতা সেন গুপ্ত, যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ম্যাপিং সেন্টারের পরিচালক জোসেফ এরিক ক্যাডোরা প্রমুখ বক্তৃতা দেন।

Share