Current Date:Oct 5, 2024

অধিবেশন শুরু, বাজেট পাস বৃহস্পতিবার

ডেস্ক রিপোর্ট : বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের শেষ বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে আজ মঙ্গলবার (০৫জুন)। চলমান সংসদের ২১তম এ অধিবেশন সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয়। চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। এছাড়া ৭ জুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) সংসদে তা পাস হবে। এবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার ১২তম বাজেট পেশ করবেন। এটি হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের এ মেয়াদের শেষ বাজেট অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর আগে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৮ জুন বাজেট পাস হবে। রোজার মাসে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হবে। জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য কুড়িগ্রামের এ কে এম মাঈদুল ইসলাম গত ১০ মে মারা যাওয়ায় শোক প্রস্তাব আনার পর আলোচনা শেষে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়। সংসদের সভাপতিমন্ডলির সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদের বৈঠকে তারা সভাপতিত্ব করবেন।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য বিশাল বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারের বাজেটের আকার চার লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার কম বেশি হবে। আগের বারের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী নিজেও সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী বাজেটে তেমন কোনো পরিবর্তন আনছেন না তিনি। এর ছয় মাস পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। ফলে পুরো একটি অর্থবছরের বাজেট দিলেও অর্থমন্ত্রীর বড় নজর থাকবে মূলত প্রথম ছয় মাস।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের বাজেটে ভ্যাটকে ৯ স্তর থেকে পাঁচ স্তরে নামিয়ে আনা হবে। সর্বোচ্চ হার হবে ১৫ শতাংশ। আগামী বছর পাঁচ স্তর থেকে তিন স্তরে নামিয়ে আনা হবে।’ ‘সিগারেট ও মোবাইল কোম্পানির জন্য করপোরেট ট্যাক্স ৪৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে। এছাড়া ব্যাংকসহ লিস্টেড-আনলিস্টেড সব কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট ট্যাক্সের সর্বোচ্চ হার হবে ৩৭.৫ শতাংশ।’

কর না বাড়লে রাজস্ব বাড়বে কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের রাজস্ব আহরণকারী সংস্থা এনবিআরের লোকজনের মন মানসিকতায় পরিবর্তন হয়েছে। একইসঙ্গে আইনেও জটিলতা কমানো হয়েছে। তাই বেশি সংখ্যক মানুষ আয়কর দিচ্ছে। এ খাত থেকেই রাজস্ব বাড়বে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের আকার চূড়ান্ত করে ফেলছেন অর্থমন্ত্রী। জানা গেছে, আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিশাল এই বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির পাঁচ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

অনেক বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি (সরকারি বেতনের অংশ) করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে বর্তমান সরকার। অর্থমন্ত্রীর ওপর এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের চাপ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে নতুন করে আরও এক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। এ জন্য বাড়তি পাঁচশ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকছে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় রয়েছে। এখন নতুন করে আরও এক হাজার যুক্ত করা হচ্ছে। শুধু এমপিও বাবদ শিক্ষকদের বেতন-ভাতায় বছরে ব্যয় হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে শিক্ষা খাতে আলাদা বড় বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে।

এবারের বাজেটে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে নজর দেওয়া হচ্ছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরসহ অবকাঠামো তৈরিতে বাজেটে ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে। ভাসানচরে আপাতত এক লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করা হবে। এ ছাড়া যেসব মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, খাদ্যসহ অন্যান্য সেবা বিষয়ে কাজ করছে, সেসব মন্ত্রণালয়ে এসব খাতে আলাদা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে।

এবারের বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুখবর আসছে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতার পাশাপাশি বৈশাখী ভাতা পাবেন। এর পরিমাণ দুই হাজার টাকা। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা দশ হাজার টাকা। এ ছাড়া তারা দুই ঈদে সমপরিমাণ দুটি বোনাস পান।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান সুবিধার পাশাপাশি বাড়তি হিসেবে এবারের বাজেটে যোগ হবে বৈশাখী এবং বিজয় দিবস ভাতা। বিজয় দিবস ভাতা হবে পাঁচ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা নিয়মিত সরকারি ভাতা পান।

সামাজিক সুরক্ষার দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে আগামী বাজেটে। বর্তমানে ৬৮ লাখ গরিব মানুষ বয়স্ক, বিধবাসহ নানা ধরনের মাসিক ভাতা পান। নির্বাচন সামনে রেখে ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে। এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া দুগ্ধদানকারী গরিব কর্মজীবী মায়ের মাসিক ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হচ্ছে।

Share