গাজীপুর প্রতিনিধি : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ গাজীপুরের ১৩ নেতাকর্মীকে আটকের প্রায় পাঁচ ঘন্টার পর রোববার রাত ১০টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে বিকাল ৫টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গীর আরিচপুর থেকে নোমানকে আটক করে টঙ্গী থানা পুলিশ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাসার সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হওয়ার পরপর তাদের আটক করা হয়।
আবদুল্লাহ আল নোমানের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) নুরুল আজিম হীরু বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাসার সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাকায় ফেরার পথে টঙ্গী পৌরসভার কাছ থেকে স্যারকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।’
সাবেক মন্ত্রী নোমানকে আটকের বিষয়ে টঙ্গী থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এএসআই তানিয়া আক্তার বলেন, নোমানসহ ১৩ জনকে থানায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাব্বির হোসেন, শহীদুল ইসলাম ও আজাদ হোসেনের নাম জানালেও বাকিদের বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি।
তবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তোফাজ্জল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তাদের আটক করা হয়নি। থানায় আনার পর ছেড়ে দেয়া হয়।
একইদিন বিকালে হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়ির ভেতর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
এদিকে নোমানকে আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। অবিলম্বে তার নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেছে দলটি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ১৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এর ১০ দিন আগে রোববার একটি রিট আমলে নিয়ে নির্বাচন ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
নির্বাচন স্থগিতের খবর পাওয়ার পর রোববার বিকালে নগরীর টঙ্গীস্থ নিজবাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।
গণসংযোগে অংশ নিতে যাওয়া কেন্দ্রীয় নেতা নোমান, বুলু, মিলনসহ আরও কয়েকজন হাসান সরকারের বাসায় যান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নোমানসহ অন্য নেতারা। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন নোমান। কিন্তু বের হওয়ার পরপরই তাকেসহ স্থানীয় বেশ কয়েক নেতাকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে হাসান উদ্দিন সরকারের ব্যক্তিগত সহকারী কিবরিয়া খান জনি জানান, হাসান উদ্দিন সরকার রোববার টঙ্গীর মিরাশপাড়ায় পূর্বনির্ধারিত গণসংযোগ ও পথসভায় যাওয়ার পথে স্থানীয় মধুমিতা রোড অতিক্রম করার সময় খবর পান হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করেছে।
তিনি এই খবর পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় না গিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী চারদিক থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান নিয়ে হাসান সরকারের বাড়ির সামনে গিয়ে জড়ো হন। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা হাসান সরকারের বাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হাসান সরকারের বাড়ির ভেতর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকারসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী পুলিশবেষ্টিত বাড়ির ভেতর অবস্থান করে।
পাশাপাশি বাড়ির বাইরে পৌর গেটে তিনটি প্রিজনভ্যান নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান করছে বলেও জানান জনি।
টঙ্গী মডেল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান, নিরাপত্তা জনিত কারণে হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়ি ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হলেও রাত নয়টা নাগাত ওই পুলিশ বেস্টনী তুলে নেয়া হয়েছে।