Current Date:Oct 5, 2024

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর কমছে আড়াই শতাংশ

ডেস্ক রিপোর্ট : বিনিয়োগকারীদের টানতে নতুন বছরের বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করা কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আরোপিত কর বিদ্যমান ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। আর অতালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আরোপিত কর বিদ্যমান ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অন্য সব ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে আরোপিত করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলে থাকেন আমাদের কর্পোরেট করহার খুব বেশি। কথাটি ঠিক নয়। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় যা বেশ কম। এছাড়া, আমাদের করহার বৈশ্বিক গড়হার (২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে ব্যাংকিং খাতের করহার কিছুটা বেশি হওয়ায় আমি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করছি। এতে এ খাত হতে রাজস্ব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা যাবে।

অন্যান্য কোম্পানি করহার অপরিবর্তিত রাখার কথা জানিয়ে মুহিত বলেন, মোটামুটিভাবে বর্তমান সর্বোচ্চ করহার হবে বাস্তবে ৪০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় হারটি হবে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। একমাত্র তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিরা এর চেয়ে উচ্চহারে কর দেবেন।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার সর্বোচ্চ সাড়ে ৩৭ শতাংশ থাকলেও শুধু ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক ১০০ টাকা মুনাফা করলে ৪০ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। এমনকি ব্যাংকের মূলধনের ভিত্তি মজবুত রাখতে খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় সেই প্রভিশনের ওপরেও ৪০ শতাংশ কর দিতে হয় ব্যাংকগুলোকে। একইসঙ্গে সুনির্দিষ্ট কিছু সিএসআর ছাড়া অন্য সব সিএসআরের ওপরও একই হারে কর পরিশোধ করতে হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও করহারের এ অসঙ্গিত দূর করতে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ব্যাংক পরিচালকেরা বাজেটের আগে ও পরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু বরাবরই ব্যাংকের এ দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে।

এর কারণ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যে কয়েকটি খাত থেকে করপোরেট কর আদায় করা হয় তার মধ্যে ৭০ শতাংশ আসে শুধু ব্যাংক খাত থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ আসে অন্যান্য খাত থেকে। সুতরাং ব্যাংকের করপোরেট কর কমিয়ে দিলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাঘাত ঘটবে। এ কারণেই এতোদিন ব্যাংকের ওপর থেকে করপোরেট কর কমানো হয়নি; কিন্তু এবার সরাসরি অর্থমন্ত্রী করপোরেট করহার কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়ার কারণে নির্বাচনী বছরে ব্যাংকারদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তবে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য রিভাইস বাজেটে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে ব্যাংক খাতের করহার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। কেননা বর্তমানে আয়ের প্রকৃতিভেদে ব্যাংক খাতসহ কোম্পানি বা করপোরেট করের ছয়টি স্তর রয়েছে। করপোরেট করের সর্বোচ্চ হার ৪৫ এবং সর্বনিম্ন্ন ২৫ শতাংশ। একক খাত হিসেবে ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি করপোরেট কর আদায় হয়। ব্যাংকগুলো বছরে যে পরিমাণ মুনাফা করে তা থেকে ৪০ শতাংশ হারে কর আদায় করে সরকার। জানা যায়, করপোরেট কর থেকে ১০০ টাকা আদায় হলে ৭০ টাকা আসে ব্যাংক খাত থেকে। অবশিষ্ট ৩০ টাকা অন্য সব কোম্পানি থেকে। বর্তমানে এনবিআরের অধীনে ৬০টি ব্যাংক নিবন্ধিত। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসব ব্যাংক থেকে আদায় হয় সাত হাজার ৩০৪ কোটি টাকা।

ব্যাংক ছাড়া অন্য যেসব খাত থেকে করপোরেট কর আদায় করা হয় সেগুলো হলো- মোবাইল ও সিগারেট কোম্পানি ৪৫ শতাংশ, লিজিং ও মার্চেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাড়ে ৩৭ শতাংশ, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানি ৩৫ শতাংশ এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ হারে করহার নির্ধারিত আছে।

Share