Current Date:Nov 26, 2024

আলু ও টমেটোর দাম

আলু ও টমেটোর দাম

ডেস্ক রিপোর্ট : শস্যের ফলন ভালো হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা, কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই তার উল্টোটা ঘটে। এ দেশে ‘বাম্পার ফলন’ হলে কৃষকের মুখ কালো হয়, কারণ ফসলের দাম এত কমে যায় যে চাষবাসের খরচই ওঠে না।

আলু আর টমেটো নিয়ে কৃষকের সেই দুঃখের দিন শুরু হয়েছে। গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে যে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি উঠেছিল ১৫০ টাকায়, সেই টমেটোর দাম এখন পাঁচ টাকার নিচে। সিলেটের টমেটোচাষিরা গরুকে টমেটো খাওয়াচ্ছেন-এমন ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আলু নিয়েও কৃষকদের একই দুর্দশা; কৃষক পর্যায়ে আলুর কেজিপ্রতি পাইকারি দাম পাঁচ টাকায় নেমে গেছে। অবশ্য রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে ভোক্তাপর্যায়ে টমেটো ও আলুর দাম এখনো একটু বেশি, কিন্তু তাতে কৃষকদের কোনো লাভ হচ্ছে না। এই বাড়তি টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। তা ছাড়া পরিবহন খরচ এবং পথে পথে চাঁদাবাজি, টোল ইত্যাদির ফলেও শহরগুলোর বাজার পর্যন্ত আসতে অন্যান্য কৃষিপণ্যের মতোই আলু ও টমেটোর দাম কিছু বেশি হয়।

কোনো পণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে যাওয়া বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। ধান, আলু, টমেটো ইত্যাদি কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সেটা যখন ঘটে, তখন কৃষকদের জন্য অসহায় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই পরিস্থিতি থেকে কৃষকদের উদ্ধার করার কার্যকর সরকারি ব্যবস্থা থাকে না বললেই চলে। ফলে এ দেশে এটি একটি চিরাচরিত সমস্যা; যেনবা এ থেকে উদ্ধারের কোনো উপায় নেই।

কিন্তু আসলে কি তাই? আমাদের মাটি উর্বর, কৃষকেরা পরিশ্রমী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক না এলে মাঠে মাঠে শস্যের বিপুল সম্ভার সৃষ্টি হয়-এটা তো আমাদের সৌভাগ্যের বিষয়। এই সৌভাগ্য কেন আমাদের কৃষকদের জন্য দুর্ভাগ্য হয়ে ওঠে? এই প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের কৃষিব্যবস্থার বনিয়াদি কিছু বিষয়। কৃষি প্রযুক্তির উন্নতি ঘটেছে, ফলন বেড়েছে এবং ক্রমেই বাড়ছে, কিন্তু কৃষিপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা এখনো সেকেলে রয়ে গেছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য আমরা কী করব, সে বিষয়ে চিন্তা ও পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গেছে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে আলুর বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। কয়েক বছর ধরে আলুর ফলন ক্রমে বাড়ছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ টন, কিন্তু গত অর্থবছরে মোট উৎপাদিত আলুর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ২০-২২ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হচ্ছে। এই উদ্বৃত্ত আলু আমরা কী করব? রপ্তানি করতে হবে। যেসব দেশে আলুর চাহিদা আছে, সেসব বাজারে আমাদের আলু রপ্তানি করার চেষ্টা করতে হবে। এ লক্ষ্যে কিছু চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু অভিজ্ঞতা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। কারণ, আলু আমদানিকারক দেশগুলোতে আমাদের আলু গুণগত মানসম্পন্ন বলে বিবেচিত হচ্ছে না। আলু থেকে চিপস, স্টার্চ ইত্যাদি তৈরি করা হয়, আমাদের আলু সেসবের উপযোগী নয়। কৃষিভিত্তিক শিল্পে ব্যবহার্য কৃষিপণ্যের আকার, জাত, গুণগত বৈশিষ্ট্যের ধরন ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সম্পর্কে আমাদের ধারণার অভাব রয়েছে।

আমাদের কৃষিকে শিল্প-বাণিজ্যের স্তরে উন্নীত করতে হবে। এ জন্য সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক, বেসরকারি শিল্প-ব্যবসায়িক, কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষি অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আমাদের উর্বর মাটি আছে, সেই মাটিতে বিশ্ববাজারের চাহিদাসম্পন্ন ও উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করে তা রপ্তানি করার মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ আমাদের নিতে হবে।

শস্যের ফলন ভালো হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা, কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই তার উল্টোটা ঘটে। এ দেশে ‘বাম্পার ফলন’ হলে কৃষকের মুখ কালো হয়, কারণ ফসলের দাম এত কমে যায় যে চাষবাসের খরচই ওঠে না।

আলু আর টমেটো নিয়ে কৃষকের সেই দুঃখের দিন শুরু হয়েছে। গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে যে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি উঠেছিল ১৫০ টাকায়, সেই টমেটোর দাম এখন পাঁচ টাকার নিচে। সিলেটের টমেটোচাষিরা গরুকে টমেটো খাওয়াচ্ছেন-এমন ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আলু নিয়েও কৃষকদের একই দুর্দশা; কৃষক পর্যায়ে আলুর কেজিপ্রতি পাইকারি দাম পাঁচ টাকায় নেমে গেছে। অবশ্য রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে ভোক্তাপর্যায়ে টমেটো ও আলুর দাম এখনো একটু বেশি, কিন্তু তাতে কৃষকদের কোনো লাভ হচ্ছে না। এই বাড়তি টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। তা ছাড়া পরিবহন খরচ এবং পথে পথে চাঁদাবাজি, টোল ইত্যাদির ফলেও শহরগুলোর বাজার পর্যন্ত আসতে অন্যান্য কৃষিপণ্যের মতোই আলু ও টমেটোর দাম কিছু বেশি হয়।

কোনো পণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে যাওয়া বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। ধান, আলু, টমেটো ইত্যাদি কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সেটা যখন ঘটে, তখন কৃষকদের জন্য অসহায় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই পরিস্থিতি থেকে কৃষকদের উদ্ধার করার কার্যকর সরকারি ব্যবস্থা থাকে না বললেই চলে। ফলে এ দেশে এটি একটি চিরাচরিত সমস্যা; যেনবা এ থেকে উদ্ধারের কোনো উপায় নেই।

কিন্তু আসলে কি তাই? আমাদের মাটি উর্বর, কৃষকেরা পরিশ্রমী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক না এলে মাঠে মাঠে শস্যের বিপুল সম্ভার সৃষ্টি হয়-এটা তো আমাদের সৌভাগ্যের বিষয়। এই সৌভাগ্য কেন আমাদের কৃষকদের জন্য দুর্ভাগ্য হয়ে ওঠে? এই প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের কৃষিব্যবস্থার বনিয়াদি কিছু বিষয়। কৃষি প্রযুক্তির উন্নতি ঘটেছে, ফলন বেড়েছে এবং ক্রমেই বাড়ছে, কিন্তু কৃষিপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা এখনো সেকেলে রয়ে গেছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য আমরা কী করব, সে বিষয়ে চিন্তা ও পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গেছে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে আলুর বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। কয়েক বছর ধরে আলুর ফলন ক্রমে বাড়ছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ টন, কিন্তু গত অর্থবছরে মোট উৎপাদিত আলুর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ২০-২২ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হচ্ছে। এই উদ্বৃত্ত আলু আমরা কী করব? রপ্তানি করতে হবে। যেসব দেশে আলুর চাহিদা আছে, সেসব বাজারে আমাদের আলু রপ্তানি করার চেষ্টা করতে হবে। এ লক্ষ্যে কিছু চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু অভিজ্ঞতা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। কারণ, আলু আমদানিকারক দেশগুলোতে আমাদের আলু গুণগত মানসম্পন্ন বলে বিবেচিত হচ্ছে না। আলু থেকে চিপস, স্টার্চ ইত্যাদি তৈরি করা হয়, আমাদের আলু সেসবের উপযোগী নয়। কৃষিভিত্তিক শিল্পে ব্যবহার্য কৃষিপণ্যের আকার, জাত, গুণগত বৈশিষ্ট্যের ধরন ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সম্পর্কে আমাদের ধারণার অভাব রয়েছে।

আমাদের কৃষিকে শিল্প-বাণিজ্যের স্তরে উন্নীত করতে হবে। এ জন্য সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক, বেসরকারি শিল্প-ব্যবসায়িক, কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষি অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আমাদের উর্বর মাটি আছে, সেই মাটিতে বিশ্ববাজারের চাহিদাসম্পন্ন ও উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করে তা রপ্তানি করার মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ আমাদের নিতে হবে।

Share