নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতার নামটাই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা করেছিলো। টেলিভিশনে কোনো প্রসঙ্গ আসতো ওই নামটা মুছে যেতো। যদি অনেক ছবির মধ্যে ছবি আসতো, ওই জায়গাটা ঝিরঝির করে দেখানো হতো। এমনভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিলো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়। ইতিহাসকে কেউ কখনো নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। আজকে তা প্রমাণ হয়েছে।’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নামটা (শেখ মুজিবুর রহমানের) আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সংগ্রামের মধ্য থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল, আজকে সারা বিশ্বের প্রমাণ হয়েছে ৭ মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্বীকৃতি পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের মানুষের মধ্যে যখন স্বস্তি, আশা-বিশ্বাস ফিরে এসেছে ঠিক সেই মুহূর্তে আঘাত। কী অন্যায় তিনি (বঙ্গবন্ধু) করেছিলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলেন, আত্মপরিচয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন, একটি রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন এ দেশের মানুষকে। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। পঁচাত্তরের পর ক্ষমতায় এসেছে কারা, যারা স্বাধীনতাবিরোধী।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যেসকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, যারা নারী ধর্ষণ করেছিলো, মা-বোনদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলো। তাদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। যারা গণহত্যা চালিয়েছিলো। যারা দেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে নাই, দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের পর সেই স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা বানিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়। যেদেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসে সে দেশের উন্নয়ন কীভাবে হবে?’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে যেয়ে আমাদের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারপরও তারা থেমে থাকেনি। এই ভাষণ তারা বাজিয়েছে।
দেশের অতীত ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের বহুমানুষ এক বেলা খেতে পেতো না। এরকম লাখো লাখো মানুষ ছিল। কোটি কোটি মানুষ ছিল। পরনে জীর্ণ কাপড়, থাকার মতো ঘর নেই। রোগে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত, এক ফোঁটা ওষুধ পেতো না। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, রাজনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন সংগ্রাম। যেখানে তিনি অন্যায় দেখেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। ফলাফল তিনি গ্রেপ্তার, বন্দী।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটা প্রদেশকে একটি রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করেছেন। মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছেন। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নত করার জন্য সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন মানুষ।
খুব শিগগিরই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের সম্মান পেতে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা কারো কাছে মাথা নত করে চলবো না। বঙ্গবন্ধু এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন।’
‘আমরা সরকারে এসে বাংলাদেশের জনগণের মৃখে হাসি ফোটাবো, উন্নয়ন করবো, বিশ্বের বুকে দেশের নাম তুলে ধরবো। আমরা স্বাক্ষরাতার হার বাড়িয়েছি। জাতির পিতার শুরু করা কাজ পুনরায় শুরু করেছি’- বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা বাংলার জনগণকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায়নি। সেই সময় জাতির পিতাকে বারবার হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য সারা জীবন যুদ্ধ করেছেন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, রাজনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ।