Current Date:Oct 4, 2024

ঈদ মৌসুমে প্রতিদিনই ক্রেতার ভিড় বাড়ছে ভুলতার পাইকারি বাজার

ডেস্ক রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকার গাউছিয়া মার্কেট তৈরি পোশাকের বৃহত্তম পাইকারি বাণিজ্যস্থল হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রায় সাড়ে চার হাজার পাইকারি ও খুচরা দোকানে দিনভর চলে বেচাকেনা। বিশেষ করে প্রতি সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার সারাদেশের তৈরি পোশাক বিক্রেতার ভিড় জমে গাউছিয়া মার্কেটে। তবে ঈদ সামনে রেখে বেচাকেনার ধুম চলছে নিত্যদিনই। বিক্রেতাদের আশা, এবার ঈদে শতকোটি টাকার লেনদেন হবে প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে স্থাপিত এই মার্কেটে।

রাজধানী থেকে ২৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত গাউছিয়া মার্কেটে গিয়ে সম্প্রতি দেখা গেল, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জাকাতের কাপড় নিতে আসা ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। গাউছিয়া-১ ও গাউছিয়া-২ মার্কেটে শাড়ি, ওড়না, লুঙ্গি, গামছা প্রভৃতি পাইকারি হিসেবে বিক্রি হয়। সীমিত দামে চাহিদা

অনুযায়ী শাড়ি, লুঙ্গিসহ অন্যান্য কাপড় সহজলভ্য হওয়ায় কয়েক বছরে এই মার্কেট নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। ঈদ সামনে রেখে দোকানিরা নতুন পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বিক্রি। ক্রেতাদের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই মার্কেটে পুরুষের পাশাপাশি নারী ব্যবসায়ীর সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো।

বিক্রেতারা জানান, এমনিতেই এই মার্কেটের প্রত্যেক দোকানে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার পোশাক বিক্রি হয়। বড় বড় দোকানে বিক্রির পরিমাণ ১০ লাখ টাকারও বেশি। ঈদ মৌসুমে প্রতিদিনই ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। অন্যান্য সময় সোম ও মঙ্গলবার এই মার্কেটে ঢল নামে ক্রেতার। খানজী শাড়ি বিতানের স্বত্বাধিকারী আবু ছিদ্দিক সমকালকে বলেন, হাটবারে (মঙ্গলবার) এই মার্কেটে প্রায় ৪০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে বিক্রি আরও বেড়েছে। ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই মার্কেট খোলা থাকবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য।

বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেল, মেয়েদের পোশাকের মধ্যে বুটিক থ্রিপিস ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, লিলেন চঙি ৪০০ টাকা, জয়পুরী সুতি প্রিন্ট ২৫০ টাকা, জর্জেট ১ হাজার টাকা, সিল্ক্ক ১১০০ টাকা এবং নেট কাপড়ের থ্রিপিস ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গজ হিসেবে বাংলা লিলেন প্রতিগজ ১৩০ টাকা, কটন ১৫০ টাকা, সুতি পভলিন ৪০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি গজ ৮০ থেকে ১৫০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। ওড়না ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, গাউছিয়ার হাট একসময় কেবল শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও চাদরের জন্য খ্যাত ছিল। ১৯৭৯ সালে গড়ে ওঠা এই মার্কেটে প্রশস্তের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খ্যাতিও। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় তাঁতবস্ত্র বিপণনকেন্দ্রও এই গাউছিয়া মার্কেট। রুমাল থেকে জামদানি শাড়ি, মাথার টুপি, পাঞ্জাবিও মিলছে এই হাটে। মেসার্স এবি ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী মো. সোহাগ জানান, ছাপা কাপড়, থান কাপড়, সুতি কাপড়, গজ কাপড়, সালোয়ার কামিজ, থ্রি পিস, ওড়না, শার্ট-প্যান্ট তো বটেই; রমজানে বাড়তি যোগ হয় জাকাতের কাপড়ও। চট্টগ্রাম, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, জামালপুর, ময়মনসিংহ, পাবনা, ভোলা, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের সব প্রান্তের পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে মুখর থাকে গাউছিয়া হাট।

খুচড়া ক্রেতার ভিড় :হাটের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে মার্কেটের নিচতলার শাড়ির দোকানগুলোতে দেখা গেছে বিত্তশালীর ভিড়। ঐতিহ্যবাহী নোয়াপাড়ার জামদানি, জর্জেট, কাতান, এসকে জর্জেট, সিমার জর্জেট, স্পিরিং কাতান, টাঙ্গাইলের বালুচুরি ও রাজশাহী সিল্ক্কের চাহিদা বেশি। মধ্যবিত্তের ক্রেতারও অভাব নেই। পছন্দের পণ্যের খোঁজে পুরো মার্কেট চষে বেড়াচ্ছেন সবাই। জুতার দোকানেও ব্যাপক ভিড়। মার্কেটের সামনে ফুটপাতে দোকানেও ক্রেতার কমতি নেই। ভিড় দেখা গেল কসমেটিক্সের দোকানেও।

গাউছিয়া মার্কেট ঘিরে স্থানীয় হাজী এ আজিজ সুপারমার্কেট, তাঁত বাজার, আউয়াল মার্কেট, আবদুল হক মার্কেট, নূর ম্যানশন, মীর ম্যানশন মার্কেট, হাজী শপিং কমপ্লেক্স, রাবেত-আল হাসান মার্কেট, পাল মার্কেট, ভূইয়া মার্কেট, শের আলী মার্কেটসহ কাঞ্চন বাজার, মুড়াপাড়া বাজার, আতলাপুর, বেলদী, ইছাপুরা বাজারেও জমে উঠেছে ঈদের কেনাবেচা।

Share