নিউজ ডেস্ক : ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে ইতোমধ্যে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা যেন থাকে সে প্রত্যাশাও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার সিডনিতে এক নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় তার ব্যবস্থা, তার পরিকল্পনা, তার নীতিনির্ধারণী ইতোমধ্যেই করেছি।
“এখন থেকে শুরু করছি, ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল- আমরা বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চাই, কী উন্নতি করেত চাই। আমরা সেই পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু করে দিয়েছি।”
সিডনি শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিকালে এই সংবর্ধনার আয়োজন করে অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগI
শেখ হাসিনা বলেন, “২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ।”
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি ইতোমধ্যেই পেয়েছে বাংলাদেশ।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতার আসার পর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে।
সেই লক্ষ্য অর্জনের যাত্রাপথের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ চলার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেই এর খসড়া ‘লাইন বাই লাইন’ পড়েছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় এই সংক্রান্ত বৈঠক হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঠিক যেদিন আসি, সেদিন দুপুরে বসে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করেছিI
“আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব, মর্যাদা নিয়ে চলব, মাথা উঁচু করে চলব।”
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় তার সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যে পরিকল্পনা নেই, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনাI বিএনপি কিন্তু পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিত না, অ্যাডহক বেসিসে তাদের পরিকল্পনা ছিল।”
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসার পর ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আওয়ামী লীগ সরকারI বর্তমানে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কাজ চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি ও আশু বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ার ফলে দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে।”
উন্নয়নের এই ধারা ধরে রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশকে যখন উন্নয়নের একটা ধারায় নিয়ে এসেছি, এটা যেন চলমান থাকে। ওই যুদ্ধাপরাধী, খুনি, জাতির পিতার হত্যাকারীদের পুরস্কৃত যারা করেছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না; স্বাধীন বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে চলুক, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হোক- এটা যারা বিশ্বাস করে না, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে।
“আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। লাখো শহীদের রক্তের মর্যাদা আমাদের দিতে হবে।”
প্রধান রাজনৈতিক পক্ষের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। ক্ষমতাকে নিজেদের ভোগ বিলাসের বস্তু বানিয়েছে, ক্ষমতা মানে কোন বাদশাহর দরবারে গিয়ে কী দেখে আসল, গালফ স্টেটে গিয়ে কী একখান চেয়ারের রঙ দেখল, কোথায় একটা সোফা দেখল, কোথায় একটা গয়না দেখল, কোথায় হীরে জহরত দেখল, কোথায় ফ্রেঞ্চ শিফন দেখল, কোথায় কী দেখল- ওর জন্য জীবন তাদের চলে যাচ্ছে।”
কারও নাম উল্লেখ না করলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ইঙ্গিত করে এসব বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের তো তা নয়। আমরা খেয়ে পরে ঘর থেকে এসেছি। আমরা তো চাবাগান থেকেও আসি নাই, আর ওই কুচবিহার থেক কুচ কুচ বিহারী হয়েও আসি নাই।”
খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়ি ফেনী হলেও তার জন্ম দিনাজপুরে। তার জন্মস্থান নিয়ে সংসদে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদরা আর এরশাদের জন্ম ভারতের কুচিবহারেI
শেখ হাসিনা বলেন, “এই বাংলার মাটিতে আমাদের জন্ম, এই বাংলার মাটিতে আমরা বড় হয়েছি। বাংলার মানুষের জন্য আমার বাবা সারা জীবন কাজ করেছে। আমরা সেভাবেই কাজ করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, “বাংলার মানুষ যখন ভালো থাকে, একটা কিছু ভালো অর্জন হয় তখন সাথে সাথে রেহানাকে (শেখ রেহানা) ফোন করি, কথা বলি- আজকে আমরা এই অর্জনটা করতে পেরেছি।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হাসিনা বলেন, “আজকে যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার দশ বছরের মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশ না, উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতI তাকে তো বাঁচতে দেওয়া হলো না, তাকে তো কেড়ে নেওয়া হল।”
ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে তার সরকারের এই নয় বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিস্তারিত তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।