Current Date:Sep 30, 2024

উন্নয়ন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও সরকারকে নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

ডেস্ক রিপোর্ট : অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা আর দুর্নীতি বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিয়মিত চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। কর্মসংস্থানের অপ্রতুল সুযোগ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে মানুষের মনে। বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। তবে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন প্রশ্নে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারকে নিয়ে রয়েছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক অলাভজনক নিরপেক্ষ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার আইআরআইয়ের ওয়েবসাইটে গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়।

গবেষণাটির ব্যাপারে এশিয়ায় আইআরআইয়ের আঞ্চলিক পরিচালক ডেরেক লাইতেন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এলেও আমাদের গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে বহু বাংলাদেশি। একই সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে।

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আইআরআই বলেছে, গত বছরের মার্চ ও এপ্রিলে বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে জরিপ চালানো হয়। এর সম্পূরক পদক্ষেপ হিসেবে একই বছরের ৯ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনস (এফজিডি) বা গোষ্ঠী পর্যায়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

আইআরআই বলেছে, অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে অনেকেই এ জন্য সরকারকে দায়ী করেননি। অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সম্পদের অসম বণ্টন ও সুযোগের অভাবের সমালোচনা করেছেন। বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণকারী বলেছেন, ধনীর সম্পদ আরও বাড়ছে, পক্ষান্তরে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়েও হতাশা ব্যক্ত করেছেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে প্রধান দুই অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা। চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষ অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক অংশগ্রহণকারী। রংপুরে এক অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম চাকরি পাচ্ছে না। বর্তমানে সরকারি চাকরি পেতে কমপক্ষে সাত থেকে আট লাখ টাকা লাগে। আমাদের জেলায় এক বা দুজন এভাবে চাকরি পায়, বাকিরা বেকার রয়ে যায়।’

দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ লোক। ময়মনসিংহে এক নারী বলেন, বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিনিধি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন। পক্ষান্তরে বিএনপি ও দলটির প্রধান খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তাঁদের। জাতীয় সংসদে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অংশগ্রহণকারীরা দ্বিধাবিভক্ত মত দিয়েছেন। রংপুরের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা যেহেতু ঠিক নেই, কাজেই আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন।’ তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিপক্ষে মত দেওয়া লোকজন বলেছেন, এই সরকারব্যবস্থার কারণে সহিংসতার সৃষ্টি হয়, হরতাল-অবরোধ হয় ও অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়।

এশিয়ায় আইআরআইয়ের আঞ্চলিক পরিচালক ডেরেক লাইতেন বলেন, অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেছেন। তবে তাঁরা গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রায় সব অংশগ্রহণকারীই মনে করেন, গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব। কাজেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করাও প্রয়োজন। প্রথম আলো

Share