Current Date:Sep 24, 2024

এখনো ২৬ শতাংশ গার্মেন্টস ভবনের নিরপত্তা সন্তোষজনক নয়

অর্থনীতি ডেস্ক : তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরও গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। গত পাঁচ বছরে এ নিয়ে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবুও শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) বলছে, এখনো ২৬ শতাংশ কারখানা ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। অন্তত ১৬ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেই। আর পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেই অন্তত ৩০ শতাংশ কারখানায়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ১ হাজার ৭৭১টি কারখানা পরিদর্শন একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে ডিআইএফই। ওই প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

কারখানার কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে মোট ২৬টি বিষয়ের উপর জরিপ চালায় ডিআইএফই। এর মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত ইস্যুটি প্রকাশ না করলেও বাকী ২৫টি বিষয় জরিপ প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। ২৫টি ইস্যুর মধ্যে শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ভালো অগ্রগতি থাকলেও ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় ঘাটতিতে চিন্তিত স্বয়ং ডিআইএফই।

ডিআইএফই’র মহাপরিদর্শক শামসুজ্জামান ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, পরিদর্শনের পর যে সব কারখানায় নিরাপত্তায় সমস্যা পাওয়া গেছে, সংশোধনের জন্য তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তিন দফা নোটিশ পাঠানোর পরও যারা সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করা হয়েছে। তবে কত সংখ্যক কারখানার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেই সংখ্যা জানাতে পারেন নি তিনি।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও এই দুটি সংগঠনের সদস্য নয়, এমন কারখানা মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৭৭১টি কারখানার উপর এ জরিপকাজ চালানো হয়। এর মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্য ১ হাজার ১৮১, বিকেএমইএ’র সদস্য ৪৭৫। এর বাইরে ১১৫টি গার্মেন্টস কারখানা কোন সংগঠনেরই সদস্য নয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য বহির্ভুত কারখানায় সমস্যা অপেক্ষাকৃত বেশি।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিজিএমইএভুক্ত ৩১ শতাংশ কারখানা ভবনের নিরাপত্তা সন্তোষজন পর্যায়ে নেই। বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত এমন কারখানার হার ৯ শতাংশ। এ দুটি সংগঠনের সদস্য বহির্ভূত কারখানা ভবনের ৪৭ শতাংশেই সমস্যা রয়ে গেছে।

বিজিএমইএভুক্ত ৮৩ শতাংশ কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা সন্তোষজনক। বাদবাকী ১৭ শতাংশ কারখানায় ঘাটতি রয়েছে। বিকেএমইএভুক্ত ৮৯ শতাংশ কারখানায় সন্তোষজনক হলেও এ দুটি সংগঠন বহির্ভূত কারখানাগুলোর মধ্যে ২৬ শতাংশ কারখানায়ই অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। বিজিএমইএভুক্ত ৩৩ শতাংশ কারখানায় বৈদ্যুতিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে, আর বিকেএমইএতে এমন কারখানার হার ২১ শতাংশ। তবে এ দুটি সংগঠন বহির্ভূত কারখানায় এখনো বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ ধরণের অন্তত ৪৩ শতাংশ কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও ভবনের নিরাপত্তায় যে অগ্রগতি হওয়া দরকার ছিল, তা হয়নি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ইত্তেফাককে বলেন, গত প্রায় পাঁচ বছরের কাজে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএভুক্ত কারখানাগুলোর নিরাপত্তামানে শতভাগ অগ্রগতির প্রয়োজন ছিল। তা হয়নি। তবে এ দুটি সংগঠনের সদস্য বহির্ভূত কারখানার নিরাপত্তা চিত্র বলছে, ওইসব কারখানায় অনেক বেশি নজর দেওয়া দরকার।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী দারুণ সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা ও সংস্কার কাজ তদারকির লক্ষ্যে ব্র্যান্ড ও বায়ারদের সমন্বয়ে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে ক্রেতাদের দুটি জোট গঠিত হয়। এ দুটি জোটের ক্রেতাদের কাছে রপ্তানি হয়, এমন প্রায় দুই হাজার দুইশ’ কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা শেষে সংস্কার কাজ তদারক করছে সংস্থা দুটি। চলতি বছর তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথা। যথাসময়ে সংস্কার সম্পন্ন করতে না পারায় ইতিমধ্যে দেড়শ’ বেশি কারখানার সঙ্গে ব্যবসা বাতিল করেছে উভয় জোট।

Share