গত দুই বছর বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাবের মধ্যেও তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়েছে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ৫ বছরের টার্গেট নিয়ে তথ্য প্রযুক্তি কাজ শুরু করলেও সেখানে দুই বছরের মধ্যে আশি শতাংশ কাজ শেষ করেছেন। পাশাপাশি ব্লেজ সার্ভিসের মাধ্যমে মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে প্রবাসীরা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পঠাতে পারেন।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ব্যাংকটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় একথা জানান।
তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক গ্রহকদের আধুনিক সব সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপে মাধ্যমে ঘরে বসেই দুই মিনিটের মধ্যে একাউন্ট খোলা যাচ্ছে। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় ব্যাংকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে। বিদায়ী ২০২১ সালে রেকর্ড ইতিহাসের সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে। বিদায়ী বছর সোনালী ব্যাংক ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২১৫৩ কোটি টাকা । বর্তমানে ব্যাংকটিতে শ্রেনীকৃত লোন রয়েছে ৯৮০০ কোটি টাকা।
এমডি আরও বলেন, করোনা না থাকলে বিগত বছর শেষেই শেণ্রীকৃত ঋণ আমরা সিঙ্গিল ডিজিটে নামিয়ে আনতে পারতাম। আগামী বছর আমরা এটা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকের এই সাফল্যে প্রমাণ করে ব্যাংকে এখন সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। মুনাফা নয় গ্রাহক সন্তুটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। ২০২১ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের মোট বিতরনকৃত ঋণ ও অগ্রীমের পরিমান দারিয়েছে ৬৯,৩১৭ কোটি টাকা যা ২০২০ সালে এর চেয়ে ১০৬৯৪ কোটি টাকা টাকা।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ডিপোজিট এখন সোনালী ব্যাংকের। বর্তমানে ব্যাংকটিতে মোট ডিপোজিট রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল ডিপোজিটকে ব্যবহার করতে পারলে ব্যাংকটি আগামী দিনগুলোতে সব সূচকে আরো ভাল করবে বলে মনে করেন ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকমর্তারা ।
আতাউর রহমান প্রধান বলেন, দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সোনালী ব্যাংকে ৩ হাজার ২০০ কর্মকর্তা কর্মচারী করোনায় আকান্ত হয়েছে। ইতি মধ্যে ৩৩ জন মারা গেছেন।
সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন খাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা হয়। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ক্রান্তিকালেও সোনালী ব্যাংকের দেশব্যাপি ১ হাজার ২২৮টি দেশের বাইরে আরও ২টি শাখাসহ মোট ১ হাজার ২৩০ শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখা হয়েছে।
সিইও বলেন, ২০১৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটিতে যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা চালু করার উদ্যোগ নেন যাতে করে ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবা পেতে পারেন গ্রাহক। বর্তমানে দেশের এই ব্যাংকটির মোট ১২২৮টি শাখাই অনলাইন ব্যাংকের আওতায়। দেশের বৃহত্তম এই ব্যাংকটিকে একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি ২০২০ সনের মার্চ মাসে সোনালী ই-সেবা অ্যাপ চালু করেন।
বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের এই অ্যাপস চালুর পর থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত মোট ৯৯,০৩৩ টি হিসাব খোলা হয়েছে। এছাড়া ১৭ মার্চ ২০২০ সালে চালু করা হয় সোনালী ই ওয়ালেট যার মোট হিসাব সংখ্যা ১,৩৭,০৮১ টি। বর্তমানে সরকারি এই ব্যাংকে, ছোট খাট ট্রান্সজেকশন করতে এবং হিসেব খুলতে গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হয় না। সোনালী ব্যাংকের ব্লেজ অ্যাপ ব্যবহার করে প্রবাসী গ্রাহকেরা তাদের কস্টার্জিত অর্থ মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের হিসেবে জমা করতে পারেন।
আতাউর রহমান বলেন, বিশ্বে পেপারলেস ব্যাংকিং একটি জনপ্রিয় ধারণা। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে সব মানুষই স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এই কোভিডকালীন সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ফলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই সব ধরনের সেবা পাচ্ছেন, বিশেষ করে বয়োঃবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সিটিজেনগণ যারা সরকারি এই ব্যাংক থেকে ভাতা নেন তাদের জন্য এটি একটি নিরাপদ মাধ্যম।
এমডি বলেন, সময় এখন ভার্চুয়াল এন্ড স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের। কোর ব্যাংকিং সলিউশোন এর মাধ্যমে এখন নন-স্টপ ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়া হচ্ছে সোনালী ব্যাংকে। অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়্যার যুগোপযোগী করে আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি । অচিরেই সরকারি সব ভাতা সমূহ আমরা ডিজিটালি প্রদান করবো, আর আমরা অচিরেই ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করবো বৃহত্তর পরিসরে। আতাউর রহমান প্রধান একই সঙ্গে মহামারি করোনা আমাদের অনেকক্ষেত্রে পিছিয়ে দিয়েছে সত্য। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। এই সময়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা এগিয়েছি। করোনার মধ্যেও প্রতি সপ্তাহে বোর্ড (পরিষদ) সভা হয়েছে। যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পরিষদ সভায় গৃহীত হয়েছে। মহামারি আমাদের পাঁচ বছরের প্লানকে ২ বছরে বাস্তবায়ন করতে শিখিয়েছে। করোনার সময় বিকল্প পন্থায় তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ঘরে বসে হিসাব খোলার সুযোগ রেখেছি। এতে ২ লাখেরও বেশি হিসাব খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাম-গঞ্জে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে। আর এ জন্য বড় অঙ্কের আমানত বেড়েছে। পাশাপাশি আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মান উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছি। করোনার সময়ে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জিবীত করার লক্ষে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়নে সোনালী ব্যাংক কাজ করেছে। আগের বছরের তুলনায় গতবছর রেমিট্যান্সও বেড়েছে।
সোনালী ব্যাংকের বর্তমান এমডির নেতৃত্বে এ অসমান্য অর্জন করেছে ‘ব্যাংক মাতা’ হিসেবে পরিচিত দেশের সর্ববৃহৎ এই ব্যাংকটি।
আর তাই এক বছর আগে শীর্ষে যাওয়ার যে প্রত্যয় করেছিলেন ব্যাংকিং খাতে দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত এই ব্যাংকার তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন।
তবে এ সাফল্যেও তিনি আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন না বা নিজের কৃতিত্ব হিসেবে দেখছেন না। এটাকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফল হিসেবে দেখছেন। আর এ সাফল্যকে স্বাভাবিক হিসেবেই মূল্যায়ন করে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। এর আগে কর্মসংস্থান ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব করেন।