নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতকালে ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনো সময় মৌখিক, শারীরিক এবং অন্যান্যভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের কাছ থেকেই নারীরা বেশি যৌন হয়রানির শিকার হন। এই হার ৬৬ শতাংশ। দেশে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলো না থাকা, তদারকির অভাব (সিসি ক্যামেরার অভাব) ইত্যাদি বিষয়গুলো নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের ‘জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি’ কর্মসূচির সমন্বয়কারী হাসনে আরা বেগম ও ‘ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ এর (বিআইজিডি) রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কবিতা চৌধুরী।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে নারীদের নিরাপত্তা কিভাবে আরও জোরদার করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরতে ব্র্যাক এ গবেষণা করে। গবেষণা পরিচালনা করেছেন অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব, অধ্যাপক সিমিন মাহমুদ, ফাহমিদা সাদিয়া রহমান ও কবিতা চৌধুরী।
২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাস গবেষণা পরিচালিত হয়। জরিপটি পরিচালনা করা হয় ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারের বিরুলিয়ায়। সংখ্যাগত ও গুণগত ভিত্তিতে ৪১৫ জন নারী এতে অংশগ্রহণ করেন। এতে মূলত নগর, উপনগর ও গ্রামাঞ্চলের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবারের নারীদের সড়ক ও গণপরিবহন ব্যবহারের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার ওপর আলোকপাত করা হয়।
গণপরিবহন ব্যবহারকারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা ২৬-৪০ বছর বয়সী পুরুষদের উত্ত্যক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ৩৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের কাছ থেকে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করা বা চিমটি কাটা, কাছ ঘেঁষে দাঁড়ানো বা আস্তে ধাক্কা দেওয়া, চুল স্পর্শ করা বা কাঁধে হাত রাখা ইত্যাদি। ঘটনার শিকার হলে মেয়েরা কী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন— এই প্রশ্নে ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তাঁরা চুপ করে থাকেন, ৭৯ শতাংশ বলেছেন তাঁরা আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব, ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসেইন, ব্র্যাকের জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির প্রধান হাবিবুর রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির সমন্বয়কারী নিশাত সুলতানা।
সূচনা বক্তব্যে আহমেদ নাজমুল হোসেইন বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সচেতনতার অংশ হিসেবে আমরা গাজীপুর, টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশেপাশের ১০০ টি স্কুলে কাজ শুরু করেছি। এসব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা ও যৌন হয়রানি সম্পর্কে তথ্য জানানো ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সমাপনী বক্তব্যে হাবিবুর রহমান বলেন, এই অনুষ্ঠানে যেসব প্রশ্ন ও সুপারিশ উঠে এসেছে সেগুলোকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড ও বড় পরিসরে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করার সময় আমরা অবশ্যই এসব বিবেচনায় নেব।