গণপরিবহনে ‍’সিটিং’ নৈরাজ্য চলছেই, দেড় বছরেও হয়নি নীতিমালা

0
135

বিশেষ প্রতিনিধি: রাজধানীর গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস নামের নৈরাজ্য চলছেই। এসব পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। আইনি বৈধতা না থাকায় গত বছর মে মাসের শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয় বিআরটিএ। কিন্তু এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তোষ ও কর্মবিরতির প্রেক্ষিতে সিটিং সার্ভিসের নামধারি পরিবহনগুলোকে ফের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি সিটি সার্ভিস সংক্রান্ত একটি নীতিমাল তৈরির জন্য ৮ সদস্য বিশিষ্ট সুপারিশ কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত হয়নি সিটিং সার্ভিস নীতিমালা। কবে চূড়ান্ত হবে তাও নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছে রাজধানীর বাস কোম্পানিগুলো। রাতারাতি লোকাল বাস হচ্ছে সিটিং। নতুন যে সবকটি কোম্পানি সিটিং হয়েই যাত্রা শুরু করেছে।অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের যানবাহন এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ নানা অভিযোগে নগরীতে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে এই সিটিং সার্ভিস।সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া নেয়া হলেও যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। বেশিরভাগ সিটিং সার্ভিস বাসে ফ্যানের কোন ব্যবস্থা নেই। এক সিটের চেয়ে অন্য সিটের দূরত্ব কম। থামানো হয় সবখানেই। জানালা ও আসন ভাঙ্গাচোরা। তেমনি যাত্রীও তোলা হয় যেখানে সেখানে। লক্কড় ঝক্কড় বাসে ইঞ্জিনের ওপর বসানো হয় যাত্রী। সব মিলিয়ে মানসম্মত গণপরিবহন একেবারেই নেই বললেই চলে। অথচ সিটিং সার্ভিসের কোন বৈধতা নেই। ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে দিনের পর দিন।

সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে রাজধানীতে বাসের ভাড়া প্রতি কিলেমিটারে ১০ পয়সা বাড়িয়ে এক টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। মিনিবাসের ভাড়াও ১০ পয়সা বেড়ে এক টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে। সে হিসেবে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলে বাসগুলোতে মাত্র এক টাকা বেশি ভাড়া নেয়ার কথা। কিন্তু এই পরিমাণ দূরত্বে ঢাকার বিভিন্ন রুটের পরিবহনগুলোকে নতুন ভাড়া কার্যকরের অজুহাতে দুই টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এছাড়া ‘লোকাল’ বাসগুলো আগে যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া নিত এখন সেখানে ছয় টাকা নিচ্ছে। আবার আগের ৭-৮ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১০ টাকা হারে। এসব অভিযোগ স্বীকার করে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক কোনো নীতিমালা না থাকায় নিজেরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না এ নৈরাজ্য। বিআরটিএ বলছে, সিটিং সার্ভিস নিয়ে নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। তিনমাসের মধ্যে এই নীতিমালা চুড়ান্ত করার সময়সীমা থাকলেও দেড় বছরেও তা প্রণয়ণ করতে পারেনি ৮ সদস্যের সুপারিশ কমিটি।

জনস্বার্থে সিটিং সার্ভিস বহাল রাখা যাবে, নাকি বন্ধ করা হবে এসব বিষয় খতিয়ে দেখে আগামী তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কমিটির প্রধান করা হয় বিআরটিএ’র রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোঃ মাহবুব-ই রব্বানীকে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, শ্রমিক নেতা শাহজাহান বাবুল, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিনিধি, বিআরএটিএ ঢাকা বিভাগের পরিচালকসহ আরও বেশ কয়েকজন।

বিআরটিএ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাড়া নির্ধারণ, কোম্পানি গঠন, বিশেষ রঙ, মালিক সমিতির মতামতসহ নানা ইস্যুতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আবার একটি পক্ষ অবৈধ সিটিং সার্ভিসের বৈধতা দিতে আপত্তি জানাচ্ছে। সব মিলিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমধান হচ্ছে না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটিং সার্ভিস নীতিমালা ঘোষণার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য এড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী। অন্যথায় অরাজকতা কমবে না। অন্যদিকে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, যাত্রীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সিটিং সার্ভিসের বৈধতা দেয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস চালানোর কোন বৈধতা নেই। কারণ গাড়ির আসন বিবেচনা করে বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। এই হিসেবে কোন পরিবহনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কথা নয়। কিন্তু একদিকে বাস কোম্পানিগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে অন্যদিকে সিটিংয়ের নামে বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছে। এখন প্রকাশ্যে স্টিকার লাগিয়ে সিটিং সার্ভিস চলছে। এসব বাস কোম্পানিকে সহজেই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব বলে মত দেন তিনি। পাশাপাশি সিটিং সার্ভিসের বৈধতা দিলে যাত্রীদের ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করারও দাবি জানান এই নেতা।