Current Date:Oct 4, 2024

গ্যাসসংকট : জ্বলছে না চুলা

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লার বাসিন্দা নিলুফার ইয়াসমিন। রোজা শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি গ্যাসসংকটে ভুগছেন। ফলে বাসার রান্নার কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এমনকি সাহরি-ইফতারিও প্রস্তুত করতে পারছেন না প্রয়োজনমতো। তিনি বলেন, ‘গ্যাস সব সময় থাকে না। এ ছাড়া কখনো গ্যাস এলে চুলা মিটিমিটি করে জ্বলে। ভাত রান্না করতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা।’ শুধু জহুরী মহল্লায় নয়, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, শ্যামলী, মহাখালী এলাকায় গ্যাসসংকট এখন চরমে পৌঁছেছে।

পুরান ঢাকার টিকাটুলী, গোপীবাগ, ধলপুর, ধোলাইরপাড়, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, নবীনগর, মুরাদপুর, পাটেরবাগ, হাজী খোরশেদ আলী রোড, কুতুবখালী, জিয়া সরণি, মৃধাবাড়ী, কাজলা, ভাঙ্গা প্রেস, মীরহাজীরবাগ, শহীদ ফারুক রোড, টিপু সুলতান রোড, নবাবপুর রোড, নারিন্দা, ফুলবাড়িয়া, বিবির বাগিচা, করাতিটোলা, কুলুটোলা, দক্ষিণ মুগদা, মৈশুণ্ডী, বনগ্রাম, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, স্বামীবাগ, কে এম দাস লেন, শাঁখারীবাজার, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বংশাল, আরামবাগ, আর কে মিশন রোড, পোস্তগোলা, জাফরাবাদ, লালবাগ, কামরাঙ্গীর চর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় গ্যাসসংকট চরমে পৌঁছেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দফায় দফায় পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও সরবরাহ নির্বিঘ্ন হচ্ছে না। গ্রাহকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। এর ফলে শহরের বেশির ভাগ এলাকার আবাসিক গ্রাহকরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। টিকাটুলী অভয় দাস লেনের বাসিন্দা আনজুমান বানু বলেন, ‘বিকেল থেকেই গ্যাসের চাপ থাকে না। সারা দিন রোজা রাখার পর রান্না করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।’ ধলপুরের বাসিন্দা সুরাইয়া আখতার বলেন, ‘গ্যাস সব সময় থাকে না। তাই লাকড়ি জোগাড় করেছি।’ ইসলামপুরের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় রোজার আগে মোটামুটি গ্যাস ছিল। রোজা আসার পর একেবারেই গ্যাস থাকছে না। মহল্লার মানুষজন বেশ কষ্টে আছে।’ রাজধানীর নাখালপাড়ার বাসিন্দা হোসেন শহীদ বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকেই গ্যাস পাওয়া যায় না। গভীর রাতে যে পরিমাণ গ্যাস আসে, তা দিয়েও রান্না করা সম্ভব হয় না। এটার সমাধান হওয়া জরুরি।’

গ্যাস-বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, চলতি মাসেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ ছাড়া রমজানে ছয় ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। রোজার কারণে এখন সকালের দিকে আবাসিক খাতে গ্যাসের ব্যবহার কম। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ এত কম থাকে যে তা দিয়ে রান্নাবান্না করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। রাজধানীতে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা রয়েছে দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে তিতাস পাচ্ছে এক হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তিতাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির আশা, বিদেশ থেকে আমদানীকৃত এলএনজি এলেই গ্যাসসংকট হ্রাস পাবে। কর্মকর্তারা আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, আমদানীকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে এ সংকট অনেকটাই কমে আসবে। চলতি মাসের ২৫ তারিখের পর যেকোনো দিন এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হবে বলে ওই কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া গ্যাস সরবরাহের চাপ ঠিক রাখতে রমজানে সিএনজি স্টেশন ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে সরবরাহ ঘাটতির পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ, বিতরণ পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতা, বসতি বৃদ্ধিসহ রোজার মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ঠিক রাখতে গ্যাসসংকট তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নিজেদের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার আল আমিন রোডের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, রমজানের আগের দিন রাত আনুমানিক ৩টার দিকে গ্যাসের চুলা মিটমিট করে জ্বলতে শুরু করে। এর আগে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি কোনো গ্যাস সরবরাহ ছিল না। এ অবস্থা এখনো রয়েছে।’ লালবাগ রোডের গৃহিণী মৌসুমি আক্তার বলেন, ‘আগে সকাল ৮টার দিকে রান্না করতাম। রোজার মাস হওয়ায় বিকেলের দিকে রান্না করতে হয়। কিন্তু গ্যাস না থাকায় ঠিকমতো রান্না করা যায় না। সাহরি তৈরির সময়ও একই অবস্থা থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্যাস না পেয়ে অনেকেই মাটির চুলা কিনে এনেছে। লাকড়ি দিয়ে রান্না করছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বুঝতে পারছি না।’

মিরপুর ৬ নম্বর সেক্টরের গৃহিণী মারিয়া আকতার বলেন, ‘গ্যাসসংকটের কারণে ঠিকমতো রান্না করতে পারি না। অনেক সময় বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খেতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিনের খরচও বাড়ছে।’

তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় রমজানে গ্যাসসংকট তৈরি হয়েছে। সরবরাহ কম হলে স্বাভাবিকভাবে গ্যাসের চাপও কমে যায়। আমদানি করা তরল গ্যাস এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে এই সমস্যা কমে যাবে। চাহিদার বিপরীতে আমরা পর্যাপ্ত গ্যাস দিতে পারব। আশা করি, গ্যাসসংকট তখন আর থাকবে না।’

Share