ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া যাতে গতবারের মত ভোগাতে না পারে, সেজন্য রাজধানীবাসীকে এবার আগেভাগেই সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।
শীত শেষে নগরীতে মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বুধবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মশক নিধনে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রামের’ উদ্বোধন করে তিনি এ আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভেতরে নিজের হাতে ফগার মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ ছিটিয়ে এ কর্মসূচির সূচনা করেন মেয়র।
দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, “এবার যাতে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব নগরে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমাদের সম্মানিত নাগরিকদের আগাম সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
“আপনাদের বাসার আঙিনায় যদি ঝোপ-ঝাড় থাকে, তাহলে সেগুলো পরিষ্কার রাখবেন। মশার বিস্তার ঘটতে পারে এমন কোথাও যদি পানি জমে থাকে, সেগুলোও পরিষ্কার রাখবেন।”
গতবছর বর্ষা মওসুমের শুরু থেকেই ঢাকায় মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন।
এডিস প্রজাতির এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস মশা থেকে চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটি টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে।
ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এ মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং রোগের লক্ষণ প্রায় একই রকম। চিকুনগুনিয়া হলে জ্বরের সঙ্গে গিটে গিটে ব্যথা, মাথা কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, চামড়ায় লালচে দানা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। সাধারণত প্রাণঘাতী না হলেও গিটে গিটে চিকুনগুনিয়া ব্যথা ভোগাতে পারে দীর্ঘদিন।
এবার শীত শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকায় মশার উপদ্রপ বেড়েছে ব্যাপক হারে। নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন ঠিকমতো মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে না।
চিকিৎসকরা বলছেন, এখন যে কিউলেক্স মশার উৎপাত চলছে, তাতে মারাত্মক কোনো রোগের ঝুঁকি কম। তবে বৃষ্টি হলে এডিস মশার উপদ্রব বাড়তে পারে এবং সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে।
ক্র্যাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দক্ষিণের মেয়র খোকন আবারও দাবি করেন, দেশের অন্য সিটি করপোরেশনের তুলনায় তার এলাকায় মশার উৎপাত তেমন ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি এখনও।
“পুরান ঢাকাসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে অনেক এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ধানমন্ডি এলাকায় কিছুটা এবং বনশ্রী, জুরাইন, কামরাঙ্গীচর এলাকায় মশার উপদ্রব রয়েছে।”
মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ‘সম্ভব সবকিছু’ করবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র বলেন, “আমাদের সমস্ত জনবল, সমস্ত ইকুইপমেন্ট এক জায়গায় জড়ো করে এই ক্র্যাশ প্রোগ্রামে এক একটা জোনে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাড়া মহল্লায় গিয়ে ওষুধ ছিটিয়ে আসব।”
কাউন্সিলরদের সঙ্গে স্প্রে ম্যানদের কাজের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, “আমাদের এই কার্যক্রমকে মনিটর করার জন্য প্রত্যেক এলাকায় নির্বাচিত কাউন্সিলররা আছেন। তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে আমাদের স্প্রে ম্যান, ক্রু দের মনিটর করেন, যাতে কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। এ ব্যাপারে সমন্বয়ের ঘাটতি নেই, যদি থেকে থাকে তবে আলোচনার মাধ্যমে আমরা তা ঠিক করে নেব।”
সেগুনবাগিচা ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান রতনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিডি ক্লিনের সেচ্ছাসেবী এবং সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন এ সময়।