ডেস্ক রিপোর্ট : চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নেওয়া উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ডিএসসিসি এবার আগেভাগেই মশার উপদ্রব কমাতে দুই সপ্তাহব্যাপী ‘স্পেশাল ক্রাশ প্রোগ্রাম’ কর্মসূচি শুরু করেছে। ক্রাশ প্রোগ্রামের অধীনে ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে টানা দুই সপ্তাহ ধরে মশার ওষুধ ছিটানো হবে।
গত বছর ঢাকা মহানগরে চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঢাকায় দেখা দিতে থাকে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা আগে জানা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। রোগটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ। ফলে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক আকারে। এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া জ্বরে ভুগেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। ঢাকা শহরে যে বাসায়ই এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, সে বাসায় গড়ে দুজনের বেশি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যু না হলেও এর ভয়াবহতা ব্যাপক। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড জ্বরের পাশাপাশি শরীরে নিদারুণ যন্ত্রণা হয় আর জ্বর সেরে যাওয়ার পরও গিঁটে গিঁটে অসহ্য ব্যথা হয়। এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঞ্জীবনী শক্তি একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়। তারা স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে পারে না। এ রোগ থেকে উপশমও দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
চিকুনগুনিয়ার মতো ডেঙ্গুও একটি সংক্রামক ব্যাধি। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেই সঙ্গে শরীরে, বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। শরীরে র্যাশ দেখা দেয়। এই জ্বরে অনেক ক্ষেত্রে বুকে বা পেটে পানি আসা, যকৃতে আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিসসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। ফলে এতে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে।
কাজেই এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য শুধু ডিএসসিসির উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকতে হবে। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা মহানগরের বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশা সাধারণত বাসাবাড়িতে ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজ, এসিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। এসব পরিষ্কারে নগরের প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হতে হবে। নিজ বাড়ির আঙিনা ও চারপাশও পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলে মশা জন্মাবে না। মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি ঘুমানোর সময় মশারি টানাতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে অন্য কোনো মশা তাকে কামড়াতে না পারে। কারণ অন্য মশার মাধ্যমে এ রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।