ডেস্ক রিপোর্ট : চীনের কাছে শেয়ার বিক্রি ইস্যুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যে ব্যাখ্যা চেয়েছে তা আগামী ৪ মার্চের মধ্যেই দেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এদিকে বিএসইসির অনুমোদন পাওয়ার পর চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির সময় কিছু বিষয়ে সংশোধনও করতে বলবে ডিএসসি। দেশের আইনবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না ডিএসই। গতকাল বুধবার বিকালে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড মিটিংয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমান যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত অনুসারে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডিএসইর শেয়ার বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকে বেছে নিয়েছেন ডিএসইর পর্ষদ। পরে মঙ্গলবার এ বিষয়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আগামী ৪ মার্চের মধ্যে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি। বিষয়টি ডিএসই’র পর্ষদকে অবহিত করার পর সেখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ ব্যাখ্যা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দরপত্র আহ্বান করেছি। চীন অংশ নিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এরপর বিএসইসির অনুমোদন পেলে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হবে। তখন এ বিষয়ে কিছু সংশোধন করতে বলা হবে। সংশোধন করতে রাজি না হলে আইন অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদাকরণ) শর্ত অনুসারে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি বাধ্যতামূলক। এ কারণে শেয়ার বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ডিএসই। পরে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে দুই কনসোর্টিয়াম আলাদা দরপত্রে অংশ নেয়। চীনের প্রতিষ্ঠান প্রতিটি শেয়ারের দরপ্রস্তাব করে ২২ টাকা এবং ভারত ১৫ টাকা। এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে আরও ৩০৭ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়। অনুমোদনের জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইতে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওইদিনই ডিএসইর প্রস্তাব পর্যালোচনায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রস্তাবের কিছু বিষয় উল্লেখ করে মঙ্গলবার স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ব্যাখ্যা চায় বিএসইসি।
বিএসইসি বলেছে চীনের প্রস্তাবে কিছু বিষয় রয়েছে যা দেশের আইনের পরিপন্থী। এর মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর চুক্তি যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী হওয়া, চুক্তির বিষয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিটেশন অনুযায়ী সমঝোতা করা, স্টক এক্সচেঞ্জকে নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে চীনা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনও নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। চীনের কনসোর্টিয়ামের অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- নতুন কোনো শেয়ার ইস্যু, পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তন, ১৫ শতাংশের বেশি যে কোনো স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ, ১০ কোটি টাকার বেশি যে কোনো চুক্তি করতে চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন নেয়া।
পাশাপাশি ডিএসইর আইপিও-সংক্রান্ত যে কোনো ইস্যু যেমন- শেয়ারের মূল্য, স্পন্সর নির্ধারণ, অবলেখক নিয়োগ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন এবং ইস্যু মূল্য নির্ধারণেও চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন লাগবে- এমন শর্তও জুড়ে দিয়েছে চীনের প্রতিষ্ঠানটি। ডিএসইর আর্টিকেলের ১৩৫-এ একটি নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা রয়েছে, ফলে ডিএসই যে কোনো শেয়ারধারী যার ন্যূনতম দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে তার সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারবে না। চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারী এ ধারা থেকে অব্যাহতি চেয়েছে। বিএসইসি কমিটির পর্যালোচনায় এমন তথ্যও উঠে এসেছে। এছাড়া চীনের কনসোর্টিয়াম যে ৩০৭ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা দেবে বলে ডিএসই দাবি করছে, তা নির্ধারণে কোনো নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই বলে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে। অন্যদিকে ভারতের কনসোর্টিয়াম ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন পরিপন্থী প্রস্তাব দিয়েছে বলে বিএসইসির পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। এসব কারণেই গতকালবুধবার পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়।