Current Date:Nov 25, 2024

জনগণ দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে চায় : রওশন এরশাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘জনগণ দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে চায়।’

আজ বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে রওশন এরশাদ এ কথা বলেন। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বেশিরভাগ সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘অংক কষে কষে অনেক কিছু দেখানো যেতে পারে। কিন্ত জনগণ দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে চায়।’

জাতীয় পার্টির (জাপা) এই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের জনগণ শান্তি চায়। শান্তিতে থাকতে চায়। আমাদের সেই শান্তি দিতে হবে।’

রওশন এরশাদ বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতগুলোর কি অবস্থা তা সবাই জানেন। অর্থনীতির খাতে ধস নেমেছে। শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। অর্থমন্ত্রীর মতো এ রকম যোগ্য ব্যক্তি পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকে এত বড় ধস নামলো কেন?’

শিক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে রওশন বলেন, ‘সেখানে দেখেন কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনেক কম অনুদান দেওয়া হয়। এতে উদাসীন থাকলে শিক্ষার উন্নয়ন হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস লেগেই আছে। সৌদি আরব থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা দেশে বারবার কেন হচ্ছে।’

বিরোধী দলের নেতা বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করে শিক্ষা খাতে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কি হবে। এটা বন্ধ হবে কবে? সরকার কেন এটা বন্ধ করতে পারছে না? এখানে শিক্ষা মন্ত্রীকে যদি এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় উনি কি জবাব দেবেন? সরকার যদি এক্ষেত্রে না পারে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে চেষ্টা করতে পারে। তারা কি এটা পারবে না? সাধারণ লোক তো প্রশ্নপত্র ফাঁস করে না। যারা প্রশ্নপত্র তৈরি করে তারা এটা ফাঁস করছে।’

রওশন বলেন, ‘এই সংসদ প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। সবার মনে আছে কি অবস্থায়, কোন সময় আমরা নির্বাচন করেছি। জাতীয় সংকট উত্তরনের জন্য আমাদের দলই তখন এগিয়ে এসেছিলো দেশ ও দেশের জনগণকে সাহায্য সহযোগিতা করতে। অতীতে যেসব সংসদ শেষ হয়েছে কোনো বার কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি। এবার শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ শেষ হচ্ছে। হরতাল অবরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি জনগনকে। টক শোতে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু তারা জানেন না যে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অনুসরন করছি। তাদের পার্লামেন্ট সিস্টেমে সরকারকে সহযোগিতা করে বিরোধী দল। কিন্তু তারা এটা না বুঝে বিরোধী দলের সমালোচনা করছে।’

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘দেশে কিছু কিছু বিষয়ে সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক স্নেহশীল নারী। মায়ের দরদ দিয়ে সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। সে কারণে আমি কিছু কথা বলি। প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তারপরও উনি যে চেষ্টা করছেন এটা যদি জনগন জানতে পারে তাহলে তারা শান্তি পায়। আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা অনেক কম। কিন্তু আমরা কি সেটা পূরণ করতে পারছি? চালের দাম বেশি। এর সঙ্গে মাছ, মাংসের দাম অনেক বেশি। এখন ভাতের সঙ্গে আলু ভর্তা খেতে পারে। কিন্তু ভর্তা দিয়ে কতদিন খাবে।’

জাপার এই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের জনগন শান্তি চায়। শান্তিতে থাকতে চায়। আমাদের সেই শান্তি দিতে হবে। এটা করতে হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এটা করতে হবে। জনগণের কাজ নেই বলে দেশে মাদকের বিস্তার লাভ করছে বেশি। এতে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে এটা একটি বড় ধরনের দুর্যোগ বলে মনে করি। দেশের সমস্যাগুলো যদি চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা যায় তাহলে আমরা এখনই উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবো।’

রওশন বলেন, ‘পদ্মা সেতু অবশ্যই আমাদের অবকাঠামোগত বড় মাইলফলক। এটার কাজ শুরু হয়েছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এত টাকা বরাদ্দ কেন। কিছুদিন পর পর যদি বরাদ্দ বাড়ানো হয় তাহলে কি করে হবে।’

রওশন এরশাদ বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য বলতে কি দেশে কিছু আছে। এ প্রশ্ন আমি সবার কাছে করতে চাই। এটা রোধ করতে না পারলে কাদের নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। হাসপাতালে কোনো জায়গা নেই। সব মানুষ অসুস্থ। এগুলো আপনি বন্ধ না করলে কে করবে। আপনি বলছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়বেন। কিন্তু কাদের নিয়ে গড়বেন। আজকের শিশুরা তো বাজারে থাকা খাদ্যের সঙ্গে বিষ খাচ্ছে। এসব বিবেচনা না করলে দেশের জনগন, নতুন ভবিষ্যত কোথায় যাবে? সাধারন জনগণের কথা চিন্তা করেন। ভোটারদের কথা চিন্তা করেন। আমরা চাই এদেশের মানুষ ভালো থাকুক। এখন যত উন্নয়ন হয়েছে অতীতের কোন সরকারের সময় হয়নি।’

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, আমরা বিরোধী দল হিসেবে সহযোগিতা করেছি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এখনো ঝুলে রয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এগুলো দেখতে হবে। আনান কমিশন কিছু শর্ত দিয়েছিলো। তাদের থেকে কার্যকর হবে প্রধানমন্ত্রী যে পাঁচটি শর্ত দিয়েছে সেটা। যত দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

রওশন আরও বলেন, ছেলেমেয়েদের জন্য ফেসবুক, ভাইবার আছে। এগুলো ব্যবহারের জন্য যদি সীমারেখা দেওয়া যায় তাহলে ভালো হয়। তারা লেখাপড়া করতে পারবে, স্বাস্থ্য নষ্ট হবে না। নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন আনতে হবে।

Share