Current Date:Oct 7, 2024

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদ (ইউএনএইচআরসি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাটির বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ এনে এমন ঘোষণা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও বিশ্ব নেতারা। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।

খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ইউএনএইচআরসি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংস্থাটির ১২ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা এটাই প্রথম।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা এই পদক্ষেপ নিচ্ছি, কেননা, আমাদের প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে এমন ভণ্ডামীপূর্ণ ও স্বার্থপর সংগঠনের থাকার অনুমোদন দেয়না। এসময় তিনি বলেন, ইউএনএইচআরসি মানবাধিকার নিয়ে উপহাস করছে।

হ্যালির ঘোষণা দেয়ার কয়েক মিনিট পরেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই-কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ঘোষণাটিকে ‘অবাক করা না হলেও, হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান দুনিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এদিকে এগিয়ে আসা, পেছনে যাওয়া নয়।

ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন(ইইউ) বলেছে, এই পদক্ষেপ, বিশ্বমঞ্চে, গণতন্ত্রের সমর্থক ও ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মার্কিন পদক্ষেপটিকে ‘অনুশোচনীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপটির প্রশংসা করেছে ইসরাইল। তারা ওয়াশিংটনের, ইউএনএইচআরসি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়াকে একটি ‘সাহসী’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ইউএনএইচআরসি, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনিদের হত্যা বিষয়ে তদন্তের পক্ষে ভোট দেয়ার এক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটি ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল। হ্যালি বিষয়টি নিয়ে বলেন, এই পদক্ষেপের মানে এই না যে, আমরা আমাদের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিশ্রুতিগুলো থেকেও সরে যাচ্ছি। তিনি পরিষদটিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের রক্ষক’ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের একটি মলকুণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেন।

ভেনেজুয়েলা, চীন, কিউবা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর প্রসঙ্গ টেনে হ্যালি বলেন, এই পরিষদের সদস্যদের দিকে তাকালেই একেবারে মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি একটি আতঙ্কজনক অসম্মান দেখা যায়।

গত বছর এ পরিষদকে চরম ইসরাইল-বিরোধী বলে আখ্যায়িত করে কড়া সমালোচনা করেছিলেন হ্যালি। বলেছিলেন, এ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ থাকা না থাকার বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এরকম বেশ কয়েকটি বড় ধরণের সংস্থা বা চুক্তি থেকে নিজদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি, ইউনেস্কো, ইত্যাদি। এর মধ্যে ইউনেস্কো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, সংস্থাটিকে ইসরাইল-বিরোধী বলে অভিযোগ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

জেনেভা-ভিত্তিক ইউএনএইচআরসি গঠিত হয় ২০০৬ সালে। যেসব দেশের মানবাধিকার ইস্যুতে গুরুত্বর রেকর্ড আছে তাদের সদস্যপদ দেয়ার কারণে এ পরিষদের সমালোচনা আছে। কিন্তু সমালোচনা যতই থাক, যুক্তরাষ্ট্র এখন যে অবস্থান নিয়েছে তাতে সারা বিশ্বে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সে ইস্যুগুলোতে নজরদারি করা ও চিহ্নিত করা খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

Share