বিনোদন ডেস্ক : ৫৩ বছর বয়সেও শ্রীদেবী সর্বকালের সেরাদের একজন হয়েছিলেন, এই বয়সেও তিনি যেভাবে রুটিন মেনে চলতেন, তা আজকের তরুণ অভিনয়শিল্পীরা করতে হিমশিম খেয়ে উঠবেন।
‘চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো: বেরোও এবং সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করো,’ গত বছর তার ‘মম’ ছবির প্রচারণার সময় এ মন্তব্য করেছিলেন কলকাতার এক পাঁচ তারকা হোটেলে বসে। ‘প্রত্যেক দর্শক কোনো একটা ভালো অনুভূতি নিয়ে বাসায় ফিরুক, এটাই আমি চাই।’
রবি উদায়ওয়ারের পরিচালনায় মম ছবিতে আরো কাজ করেছেন নওয়াজউদ্দীন সিদ্দিকী, অক্ষয় খান্না, আদনান সিদ্দিকী ও সজল আলী। মম ছিল মা-মেয়ের সম্পর্কের গল্প, যা পরীক্ষার মুখে পড়ে এক ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ২০১৭ সালের ৭ জুলাই ছবিটি মুক্তির আগে শ্রীদেবী উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন, ছুটে বেড়িয়েছেন ভারতের নানা প্রান্তে। অসংখ্য সাক্ষাত্কার দিয়েছেন, যা পাঁচ যুগ আগে শ্রীদেবী কখনো করেননি। এই সময়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে উপস্থিত হয়ে তার নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন, মেয়ে জানভি আর খুশিকে ঘিরে মিডিয়ার কৌতূহল— সব সামলেছেন এককভাবে।
প্রচারণার কাজে নানা জায়গায়, নানা অনুষ্ঠানে হাজিরা দেয়ার সময় তার পরিধেয় শাড়ি নিয়ে, ফ্যাশন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায় ব্লগে। কিন্তু শ্রীদেবী পুরো বিষয়টিকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেননি। স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার কোনো ধারণা নেই। ভারতীয় একজন ডিজাইনারের শাড়ি পরছি আমি। সে আমাকে দিয়েছে, আমি পরছি।’
শ্রীদেবীর পর্দায় উপস্থিতির সঙ্গে তার এই নির্বিকার আচরণ অনেকটাই বেখাপ্পা। ‘সাক্ষাত্কারে, সংবাদ মাধ্যমের সামনে আমি খুবই আত্মকেন্দ্রিক ধরনের। আমি গভীরভাবে ধর্মানুরাগী, যা আমাকে লক্ষ্যে স্থির থাকতে সাহায্য করে।’
তবে শেষ দিকে এসে শ্রীদেবী তার চারপাশের ব্যূহটাকে যেন খানিকটা শিথিল করেছিলেন। মেয়ে জানভিকে নিয়ে অজস্র প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। কিন্তু ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। তিনি শান্ত মুখে সব প্রশ্নের উত্তর জুগিয়ে গেছেন।
তার মেয়েকে অভিনয় জগতে দেখার চেয়ে বিয়েশাদি করে সংসারী দেখতে চান, শ্রীদেবীর এ কথায় অনেকের ভ্রু কুঁচকে উঠেছিল। কারণ বেশির ভাগের ধারণা ছিল, শ্রীদেবীর মেয়েও তার পদাঙ্কই অনুসরণ করবে। শ্রীদেবী চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন ১৯৬৭ সালে, তার মা-বাবারই উদ্যোগে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র চার। তার পর থেকেই শ্রীদেবী শুধু সাফল্যের পালকই কুড়িয়েছেন। স্থানীয়ভাবে বিপুল জনপ্রিয়তা তাকে নিয়ে আসে মুম্বাইয়ের সর্বভারতীয় চলচ্চিত্রের বিশাল আঙিনায়। সেখানেও তিনি শুধু এগিয়েই গেছেন।
‘আমার মায়ের সঙ্গে যেমন হয়েছিল, আমি চাই না আমার মেয়ের সঙ্গেও সে রকম কিছু হোক,’ বলেছেন শ্রীদেবী। ‘আমার দুই মেয়েই নির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধ নিয়ে বড় হয়েছে, তারা জানে কোথায় থামতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে এখন যথেষ্ট পেশাদার ব্যবস্থাপক, কলাকুশলী, নির্মাতা আছে, তার পরও আমি বলব কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। জানভির জন্য সব কিছু তৈরি থাকবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। ভাগ্যও একটা ব্যাপার। আমার মেয়েরা জানে আমি কোত্থেকে এসেছি এবং তাদের সীমা কতটুকু।’