Current Date:Sep 30, 2024

টাকার অভাবে বাবার দেখা পাচ্ছে না হাত হারানো সুমি

বগুড়া প্রতিনিধি : যমুনায় কপাল ভাঙলো। সেই যে কপাল ভাঙ্গলো আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি বগুড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় হাত হারানো শিশু সুমির পিতা। মানুষের কাছে হাত পেতে তার সংসার চলে। সুমির চাচারা টাকা দিলে মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারে। টাকা না থাকলে দেখতে যেতে পারে না। তার ভাবনা শুধু একটাই, মেয়েটি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।

গত ২২ এপ্রিল রবিবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শিশু সুমির বাম হাত। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সুমির অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সপ্তাহখানেক পর একটি ছোট অস্ত্রোপচার করা হবে।

সুমির চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক। এমনকি শিশুটির হাতে কৃত্রিম হাত প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি। এজন্য আর্থিক সহায়তাও চেয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে মিডল্যান্ড ব্যাংকের ০০২০-১০৫০০০০৮১৩ এই হিসেব নম্বরে সাহায্য পাঠানোর অনুরোধ জানান। এটি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলের হিসেব নম্বর। শিশুটির চরম বিপদে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুইয়া, শজিমেকের চিকিৎসববৃন্দ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দ পাশে দাঁড়িয়েছে।

অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারেন না সুমির বাবা দুলাল খা। তিনি বলেন, বর্তমানে চেয়েচিন্তে চলে তার সংসার। কোন দিন তিন বেলা খেয়ে আবার অনেক দিন উপোষ থাকতে হয়। খাবারের অভাবে শরীর প্রায় শেষ। কিন্তু কেউ তাদের খোঁজখবর নেয় না। মরিয়ম (স্ত্রী) মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছে। টাকার অভাবে মেয়েকে দেখতে যেতে পারি না। শেরপুর থেকে বগুড়া মেডিকেলে যাতায়াত করতে খরচ হয় তার প্রায় ১০০ টাকা। সে টাকাও তার কাছে নেই বলেও জানান।

এক যুগ আগে সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা গ্রামে বসবাস করতেন দুলাল খা। হিংস্র যমুনা বসতভিটা ভাসিয়ে নিলে শেরপুরের ফুলতলা দক্ষিণপাড়ায় খাস জমিতে আশ্রয় নেন। ৩ শতক জায়গায় টিনের ছাউনি ও ঘেরা দিয়ে কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়ে তোলেন। দুলাল খা বলেন, ভাইয়েরা মিলে কিছু টাকা দিলে সেদিন হাসপাতালে যাই। নইলে মেয়েকে দেখা হয় না। তবে তারা খেয়ে না খেয়ে থাকলেও মেয়ের চিকিৎসায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। এজন্য তিনি খুশি বলে জানান।

দুলাল খা-মরিয়ম বেগমের সংসারে তিন মেয়ে দোলেনা, সুখিয়া ও সুমি। দোলেনার বিয়ে হয়েও অভাবের তাড়নায় সংসার টেকেনি। মেয়েটি এখন ঢাকায় ঝিয়ের কাজ করে। অভাবের কারণে বাকি দুই কন্যার ভালভাবে লেখাপড়াও করাতে পারছেন না।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছাইদার রহমান সাকিব জানান, বাসের ধাক্কায় হাত হারানো সুমির বাড়ি তার ইউনিয়নে। ওই পরিবারটির পক্ষ থেকে কেউ কোন দিন তার কাছে সহযোগিতার জন্য আসেননি বলে দাবি করেন।

শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান লিটন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিবারটিকে সহযোগিতা করার জন্য পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কোন ধরনের সহযোগিতা আসলে এবার প্রথম ওই পরিবারটি পাবে বলেও দাবি করেন তিনি।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে তিনি শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন। তিনি মেয়েটির পরিবারকে দেখভাল করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়া সুযোগ আসলেই পরিবারটির জন্য সরকারি সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (শজিমেক) উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, শিশুটি বর্তমানে ভাল আছে। সপ্তাহখানেক পর একটি ছোট অস্ত্রোপচার করা হবে। এরপর কৃত্রিম হাত প্রতিস্থাপনের জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে।

Share