ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আইনটি নিয়ে আলোচনা করে এ দাবি জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আইনটি নিয়ে আলোচনা হয়। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নাগরিক সমাজের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ইফতেখারুজ্জামান, ড. সি আর আবরার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেজাউর রহমান লেনিন, সাইমুম রেজা তালুকদার, শারমিন খান।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, কথা ছিল আজ দুটি আইন নিয়ে কথা বলা হবে। একটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, যেটা অলরেডি বলবত আছে। সেটা নিয়ে যে উদ্বেগের বিষয়, সেগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে গণমাধ্যমসহ দেশের সব নাগরিকের একটা বড় ধরনের উদ্বেগ আছে। মন্ত্রীও তার আলোচনায় বলেছেন এটার অপব্যবহার হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে, সেটা সরকার অবহিত আছেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে অনেকগুলো যুক্তি উপস্থাপন করে আমরা বলেছি, আমরা মনে করি এ আইন বাতিল করা দরকার, তাছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মৌলিক যে বিচ্যুতিগুলো আছে এবং উদ্বেগের জায়গাগুলো আছে, পাশাপাশি অপব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে আইনটিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
সেটার প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যদি আইনটি ঢেলে সাজানোও হয়, তাহলেও হয়তো সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না সবার কাছে। জনকল্যাণ মুখি হবে না বলে আমাদের উদ্বেগ আছে। সে কারণে আমরা মনে করি আইনটি বাতিল করা দরকার। তার প্রেক্ষিতেই আমরা আলোচনাটা করেছি বলে জনান ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, মন্ত্রী এটি বিবেচনায় নেবেন তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আমাদের বলেছেন। কী অবস্থান হবে সেটি আমাদের জানার বিষয় মন্ত্রীর কাছ থেকে, সরকারের কাছ থেকে।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি ছিল সেটি হলো, খসড়া যে ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট সেটি নিয়ে আলোচনা করা। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। এটির নতুন আরেকটি খসড়া হয়েছে সেটি আজও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের কাছে এটির একটি কপি হস্তান্তর করা হয়েছে-বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, আগামী মাসের ৬ তারিখে (৬ এপ্রিল) খসড়া আইনটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। খাসড়া আইনটি নিয়ে এরই মধ্যে নাগরিক সমাজ, অংশজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন মন্তব্য, পরামর্শ এসেছে।
এরপর আইনমন্ত্রী বলেন, আজ দুটি আইন নিয়ে আলাপ করার কথা ছিল। একটা হচ্ছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, আরেকটা হচ্ছে ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট। যেহেতু ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্টের একটা নতুন ড্রাফট হয়েছে, আজও ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে তারা সেটা দেখে আসেননি। সে কারণে মিউচুয়াল আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত পৌঁছেছি ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে আগামী ৬ এপ্রিল বসবো। সেখানে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি আগের মিটিংয়ে যেসব সাজেশন দেওয়া হয়েছিল তার অনেকগুলোই সেখানে কনসিডারেশন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আজ মূলত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তারা তাদের প্রস্তাবনার আলোকে যুক্তি আজ পেশ করেছেন। আমরা ১২টার সময় বসেছি এবং সোয়া ২টা পর্যন্ত তাদের পক্ষই মূলত আমরা শুনেছি।
তিনি বলেন, যেখানে সমস্যা আছে সেই সমস্যা দূর করার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি কোনটা কোনটা পরিবর্তন দরকার এবং কোনটা কোনটা সঠিক আছে সেটা আমরা তুলে ধরিনি। তার কারণ হচ্ছে আমরা আজ সেই সময় পাইনি। সেজন্য আমরা আবারও ৩০ মার্চ বেলা ১১টার সময় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা কন্টিনিউ করবো। সেই দিন ইনশাল্লাহ সমাপ্তি হবে বলে আমার মনে হয়।
বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন আলোচনা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সব পক্ষে কথা শোনার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করা হয়েছে, সেইখানে আমরা থাকতে চাই। এ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলেছেন। এটি যদি ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে, তা যদি দূর করা যায়, সেটা চেষ্টা করছি।