অনলাইন ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে অপারেশনে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধ কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
রোববার এ রুল জারি করেন হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, ডিসি ও এসপি, ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডা. মোহাম্মদ শাহীনসহ সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত।
পৃথক এক রুলে চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরে চক্ষু চিকিৎসায় ২০ জনের চোখ অস্ত্রোপচারে কার্যকর, যথাযথ ও পর্যাপ্ত নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ্য ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন আাদলত। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
গত ২৯ মার্চ ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রোববার সকালে ওই প্রতিবেদনযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।
গত ৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গার কেদারগঞ্জের ইম্প্যাক্টে ২৪ জন নারী-পুরুষের একটি করে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশন বাবদ কারও কাছে দুই হাজার, কারও কাছে তিন হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়েছিল ইম্প্যাক্ট। ২৪ জনের মধ্যে ২০ জনের অপারেশন করা চোখে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। তাদের চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা ও পানি ঝরতে থাকে। ইম্প্যাক্টে যোগাযোগ করেন তারা। পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোনোরকম চিকিৎসা দিয়ে আবারও বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইম্প্যাক্টে যান। রোগীদের অপারেশন করা চোখের অবস্থা ভয়াবহ দেখে টনক নড়ে ইম্প্যাক্ট কর্তৃপক্ষের। ১৩ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকার খামারবাড়ির ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল এবং মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের দৃষ্টি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় ২০ জনকে। সেখানে ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়। তবে তাদের আরও আগে ঢাকায় আনলে হয়তো চোখ বাঁচানো সম্ভব ছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। হায়াতুন নামের এক বৃদ্ধের চোখের অবস্থাও ভালো নয়। সেটি তুলে ফেলা হতে পারে।
ঢাকা থেকে অপারেশন করা চোখ তুলে ফেলার পর রোগীদের বাড়ি পাঠিয়েই নিজেদের দায় সারে ইম্প্যাক্ট কর্তৃপক্ষ। পরে রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করেনি তারা। ২০ জনের চোখ হারানোর বিষয়ে ২৯ মার্চ সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ইম্প্যাক্টের সংশ্নিষ্টরা রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। রোগীদের তুলে ফেলা চোখের খোঁজ-খবর নেয়। গত শুক্রবার রোগীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অপারেশনের সময় নেওয়া দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা ফেরত দিয়ে আসে ইম্প্যাক্ট।