দেশের সম্পদ বিক্রি করার বাপের মেয়ে আমি নই: প্রধানমন্ত্রী

0
32

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ক্ষমতার লোভে বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকার মতো ‘বাপের মেয়ে নন’ বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনায় তিনি এ কথা।

পাকিস্তান আমলে ১৯৮৯ সালের এই দিনে জন্ম হয় আওয়ামী মুসলিম লীগের। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য পরে নাম হয় আওয়ামী লীগ।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোওরাওয়ার্দীসহ যারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “পলাশীর প্রান্তরে যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সেই সূর্য উদিত করেছে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষকে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করে দিয়েছে, স্বাধীন দেশ দিয়েছে।”

দীর্ঘ বক্তব্যে পাকিস্তান আমলে ও স্বাধীন দেশে আওয়ামী লীগের অবদান, উন্নয়নে ভূমিকা ও অন্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। এর ৫ বছর পর ফের বিরোধী দলে বসার পেছনে জনগণের সমর্থনের অভাব নয়, ‘অন্য কারণ’ ছিল বলে দাবি করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি। আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল, আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি বলেছিলাম, এই গ্যাস জনগণের, আর কতটুকু গ্যাস আছে জানি না।

“কাজেই আমার পক্ষে বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ শুধু ক্ষমতার লোভে বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব, সেই বাপের মেয়ে আমি না। আমরা চাইনি। কিন্তু মুচলেকা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।”

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা জনগণের কথা চিন্তা করেনি, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশের কী চিত্র দেখেছি?

“হাড্ডিসার কঙ্কালসার দেহ, পেটে ক্ষুধার জ্বালা, পরনে ছিন্ন কাপড়, বিদেশ থেকে কাপড় এনে তাদের বিলি করা হত। একবেলা খাবার জোটাতে পারে না, থাকার মতো কুঁড়ে ঘরটা পর্যন্ত নেই, রোগে কোনো চিকিৎসা নেই।

“সেই বাংলাদেশ তো আমার বাবা চাননি। তিনি চেয়েছিলেন এ দেশের প্রতিটি মানুষ অন্তত দুবেলা পেট পুড়ে খাবে, রোগে চিকিৎসা পাবে, শিক্ষা পাবে। আর সেই পদক্ষেপ কিন্তু তিনি নিয়েছিলেন।

“কিন্তু ২১ বছর যারা একের পর এক ক্ষমতা দখল করে তারা কিন্তু মানুষের দিকে তাকায়নি। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করেছে সরকার জনগণের সেবক। কারণ, আমি আমার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগণের সেবক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রী না।”

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পরিস্থিতিও বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যখন আমি এয়ারপোর্টে নেমে আসি, হাজার হাজার মানুষ। একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন করে যে সম্মান পেয়েছিল, বাঙালি সেই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া; শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের উন্নত জীবন দেওয়া, যা আমার বাবা দেখেছিলেন, যে জন্য বারাবার কারাবরণ করেছেন, তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। সেই প্রত্যয় নিয়ে ফিরে এসেছিলাম।

“বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলাম। ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে থেকে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম। সাক্ষরতার হার ৪৫ থেকে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করেছি। চিকিৎসা সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি।

“প্রতিটি পরিবার যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, এজন্য একটি বাড়ি একটি খাবার প্রকল্প নিয়ে তাদের সহযোগিতা করেছি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ভূমিহীন মানুষদের জন্য যেমন আমার বাবা ঘর করার প্রকল্প নিয়েছিলেন, আমরা সেইভাবে মানুষকে ঘর করে দিয়েছি।”