Current Date:Nov 30, 2024

নারীদের জন্য ব্যাংকের কর্মপরিবেশ খুবই ভালো: ইয়াছমিন বেগম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন ব্যাংকিং পেশায় আসছেন অনেক নারী। বর্তমানে এ খাতে ২৮ হাজারেরও বেশি নারী চাকরি করছেন। যা মোট কর্মীর ১৮ শতাংশ। ব্যাংকের চাকরিতে নারী কর্মীর প্রতিনিয়ত সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে নারী কর্মীদের চাকরি বদলের প্রবণতা কিংবা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতাও আগের চেয়ে কমেছে। ব্যাংক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের লিঙ্গসমতা বিষয়ক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এবিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইয়াসমিন বেগম এ প্রতিবেদকে বলেন, ব্যাংকের কর্মপরিবেশ খুবই ভালো। ব্যাংকে চাকরি করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে ২৭ সেপ্টম্বর সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করি। বর্তমানে তিনি একই ব্যাংকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে কর্মরত রয়েছেন। ইয়াসমিন বেগম আরও বলেন, সব ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আর ব্যাংকের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য কর্মপরিবেশ খুবই ভালো। তিনি বলেন, যখন যোগদান করেন তখন ব্যাংকটিতে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। এখন ব্যাংকটিতে নারী কর্মীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ইয়াসমিন বেগম আরও বলেন, আমরা পুরুষ কর্মীদের মতোই সমান সুযোগ-সুবিধা পাই। আগে যাদের এমডি হিসেবে পেয়েছি এবং বর্তমানে যিনি এমডি হিসেবে আছেন, তারা কখনো কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করেননি। ব্যাংকের কর্মপরিবেশ খুবই ভালো। শুধু আমাদের ব্যাংকই নয়, সার্বিক ব্যাংকিং খাতে কর্মপরিবেশ অনেক ভালো। আর এ কারণেই ব্যাংকের চাকরিতে নারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ২০ জন মহাব্যবস্থাপকের মধ্যে ছয়জনই নারী। শুধু রূপালী ব্যাংকই নয়, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মী কাজ করছেন। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংকের কর্মরত নারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৩৯ জন, যা ব্যাংকগুলোতে কর্মরত মোট জনবলের ১৮ শতাংশেরও বেশি। তবে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মীর সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। এই খাতের ৪১টি ব্যাংকে বর্তমানে কর্মরত নারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৯৫ জন, যা ব্যাংকগুলোতে কর্মরত মোট জনবলের প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন ১২ শতাংশের বেশি নারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারিবারিক চাপে অনেক নারী ব্যাংকে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বেশিদিন টিকে থাকতে পারছেন না। তবে পরিবারের সহযোগিতা পেলে এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্রুতই আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট জনবল ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৬ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৩৭৮ জন। এ হিসাবে ব্যাংকিং পেশায় নারীর হার দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০ বছর আগে এ হার অর্ধেকেরও কম ছিল। এখন ব্যাংকগুলোয় ৩০ বছরের কম বয়সী যেসব কর্মী আছেন তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ নারী। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীর মধ্যে নারীর হার ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৫০ বছরের বেশি বয়সীর মধ্যে এ হার বেড়ে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশে উঠেছে।
এবিষয়ে সোনালী ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা সামিমা বলেন, ব্যাংকের জবকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন। তবে যাদের বাড়িতে মা বা শাশুড়ি আছেন অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা পান তাদের জন্য কাজ করা কিছুটা সহজ হয়। আর যাদের এ সহযোগিতা নেই তাদের টিকে থাকা খুবই চ্যালেঞ্জ। জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। নারী উদ্যোক্তা, সাবেক নারী ব্যাংকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি ব্যাংকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর বেসরকারি ব্যাংকে পরিচালকদের স্ত্রী, কন্যা ও পুত্রবধূরা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে বেশি দায়িত্ব পালন করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, সরকারি ছয়টি ব্যাংকে কর্মসংস্থান বদল করা নারী কর্মকর্তার হার ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, সরকারি বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকে ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বেসরকারি বণিজ্যিক ব্যাংকে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৩৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।

 

 

 

 

Share