নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনায় ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভোটারদের সাথে শ্রেষ্ঠ তামাশা। আসলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রমাণ করলেন তার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তিনি নির্বাচন কমিশনের হাত-পা বেঁধে দিয়েছেন।
আজ সোমবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুলনার মানুষের সমর্থন মিলেছে……।’ এর জবাবে রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য- খুলনার ভোটারদের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা। অবৈধ ক্ষমতার দৌরাত্ম্যে ভোটারদের অধিকার বঞ্চিত করে এখন তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন। কারণ শেখ হাসিনার নতুন মডেলের ‘চমৎকার’ খুলনা সিটির অর্ধেকেরও কম ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি, কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারেনি হাজার হাজার ভোটার। যে নির্বাচনের পর লজ্জায় আজো নির্বাচন কমিশন কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারেনি। যে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কারচুপির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জাল ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের তদন্ত দাবি করছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র বাবার সঙ্গে ভোট দিতে পারে, মরা মানুষ ভোট দিতে পারে, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারতে পারে সে নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় এটাই প্রমাণিত হলো যে, ভোট ডাকাতির হুকুমদাতা সরকারের শীর্ষ নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে আগামী নির্বাচনও হবে খুলনা মডেলে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি নিজেই প্রমাণ করলেন তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা হবে বিরোধী দলগুলোর জন্য আত্মঘাতী।
‘নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে…….’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনে আপনাদের পছন্দের লোকজনদেরকে ঢুকিয়ে তাদের হাত-পা বেঁধে দিয়েছেন যাতে সুষ্ঠু ভোট না হয়। আসলে ইসি খুলনাতে সরকারে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। ইসি প্রতিষ্ঠান হিসাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বর্ণালী বাহিনী নন বরং এখন তারা ‘খাঁচায় পোড়া তোতা পাখি’।
রিজভী বলেন, সরকার তার কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ করে ইসিকে কব্জায় নিয়েছে। খুলনার সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভোট সন্ত্রাসের এক অভিনব নতুন মডেলের নির্বাচন যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি খারাপ নজির সৃষ্টি করলো। যে নির্বাচনে বিএনপির সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের অধিকার হরণ করে তাদের হাত-পা বেঁধে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চেপে ধরে আওয়ামী লীগকে জয় আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করার কথা বলছেন, সরকার দলীয় একজন এমপি যিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট আত্মীয়, একটানা পনের দিন সেখানে অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে কিভাবে খুলনাতে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা দেশবাসী দেখেছে গণমাধ্যমের বদৌলতে।
‘এমপি-মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে না……’ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের উত্তরে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বশীল পদে থেকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছেন। কতটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার তার আরো একটি উদাহারণ হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গতকাল গাজীপুরের টঙ্গিতে এক স্থানীয় এমপির বাসায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এমপি-মন্ত্রীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আরো এমপিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, কর্ণেল ফারুক খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, ডা. দিপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ মন্ত্রী-এমপিরা। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ঘটনায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের এক গভীর নীলনকশার বিভৎস আভাস ফুটে ওঠছে।
রিজভী বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এর আগেও তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তরুণসমাজকে ভীত করার জন্যই রাজিব ও রাজের উপর এ নির্যাতন। এছাড়া বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরও গতকাল তাকে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এটি সরকারের এক ঘৃণ্য নিপীড়নের বিভৎস চিত্র। অদৃশ্য গণতন্ত্র যাতে ফিরিয়ে আনা না যায় সেজন্যই বিরোধী দলের তরুণ নেতাদেরকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখতেই সরকারের এত কারসাজি। এগুলো অমানবিক ও মানবধিকার লঙ্ঘন যা কেবলমাত্র একটি গণবিরোধী সরকারের পক্ষে করা সম্ভব। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের সবার মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।