ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী লর্ড কার্লাইলকে ভারতের ভিসা না দেয়া হলে এটা প্রমাণিত হবে যে তাকে কারাদণ্ড ও জেলে আটকে রাখার পেছনে ভারতীয় হাইকমিশনের ভূমিকা রয়েছে। কারণ, গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় দিল্লির একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, খালেদা জিয়ার আইনি পরামর্শক লর্ড কার্লাইলকে ভারতে ঢোকার অনুমতি না দিতে দিল্লিতে জোরালো সুপারিশ পাঠিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন। ভারতীয় হাইকমিশনের এই ভূমিকা দুঃখজনক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আগ্রাসী হস্তক্ষেপ।
রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, লর্ড কার্লাইল চলতি সপ্তাহেই দিল্লি সফর করবেন। আর ১৩ জুলাই ফরেন করেসপন্ডেন্ট ক্লাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ও কারাদণ্ডের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য দেয়ার কথা। যদি ঢাকার হাইকমিশনের সুপারিশের কারণে লর্ড কার্লাইলকে ভিসা না দেয়া হয়, তাহলে এটা প্রমাণিত হবে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিতে তাদের নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের একটি ভোটারবিহীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় হাইকমিশন কর্মকর্তাদের ভূমিকা উপনিবেশিক শাসকদের মতো। যেন তারা বাংলাদেশে তাদের প্রভুদের টিকিয়ে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন যদি উপনিবেশিক শাসনের গভর্নর হাউসে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন ও সার্বভৌমত্ব অতি দুর্বল।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশের এখন কোন দলের মুখপাত্র?দেশের জনগন জানে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন কি ভুমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আরেকজন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ভারত সফরে গিয়ে সেখানকার শীর্ষস্থানীয় ‘থিংক ট্যাংক’ আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেন, ‘বিএনপি ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিএনপি হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানপন্থি।’ তার এমন উদ্ভট বেহায়াপনায় বাংলাদেশিরা হতবাক ও স্তম্ভিত।আওয়ামী সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় রাখতে সেখানে বিভিন্ন নীতিনির্ধারকদের কাছে নতজানু হয়ে লেজ নাড়িয়ে ভারতীয় কৃপা আদায়ের জন্য এইচ টি ইমামের মতো আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা এমন ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছেন, যা বাংলাদেশে বিরল। এটি যেন মোড়লের কাছে নিজের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করা।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের বলেছেন তিনি ভারতকে সবকিছু দিয়েছেন, প্রতিদান চাননি। কিন্তু এখন প্রতিদান পেতে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন ভারতে ।দেশের স্বাধীনতাকে অপমানিত করে তিনি দিল্লির দরবারে করুণা ভিক্ষা করছেন।
তিনি আরো বলেন, এইচ টি ইমাম হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘চলতি হাওয়ার পন্থি’। তিনি কতবড় অনৈতিক যে ছাত্রলীগের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমরা বিসিএসে কেবল লিখিত পরীক্ষায় পাস করো। মৌখিক পরীক্ষার দায়িত্ব আমার।’ বর্তমান এই দুঃশাসনকে টিকিয়ে রাখার মূলহোতাদের একজন হচ্ছেন এই এইচ টি ইমাম। এরা নিজের পাতে ক্ষমতার ঝোল ঢালার জন্য আত্মা বিক্রি করতেও দ্বিধা করেন না।ভারত বিএনপিকে সুযোগ দেবে না- এইচ টি ইমামের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘এইচ টি ইমামকে বলতে চাই, ভারত সুযোগ দেওয়ার কে? বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সুযোগও দেবে দেশের জনগণ। আপনার বক্তব্যে বোঝা যায় বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের চাবিকাঠি ভারত। আর সেজন্যই প্রভুদের কাছে দেনদরবার শুরু করেছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রভুদের কাছে তাই এত আকুতি মিনতি করছেন। কিন্তু দেশের জনগণ আর সেই সুযোগ আপনাদের দেবে না।জনগণকে পাশ কাটিয়ে দেশে আর কোনও ষড়যন্ত্রমূলক ভোটারবিহীন জাতীয় নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক রেখেছে এই সরকার। তার মুক্তির দাবিতে আগামীকাল সকল বাধাকে অতিক্রম করে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে সমাবেত হবেন। আমরা না খেয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন পালন করব। অনশনের স্থান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ও মহানগর নাট্যমঞ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাদা মিয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামছুজ্জামান সুরুজ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।