Current Date:Nov 25, 2024

বাপ্পার সম্মানের কথা ভেবে চুপ ছিলাম : চাঁদনী

বিনোদন প্রতিবেদক : অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী। মূলত নাচের মানুষ তিনি। কিন্তু নাটক সিনেমায় অভিনয় করেও নিজের জাত চিনিয়েছেন। মাঝে অনেকটা সময় অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন এই অভিনেত্রী। বর্তমানে নাচ নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে সংসার পেতেছেন চাঁদনী। ২০০৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এই জুটি। কিন্তু অনেক দিন ধরেই শোবিজ অঙ্গনে গুঞ্জন, বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে তাদের। কিছু সংবাদমাধ্যম তাদের বিচ্ছেদের খবরও প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে কথা বলেন চাঁদনী। একান্ত আলাপচারিতার বিশেষ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : আপনাদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে…

চাঁদনী: এ বিষয়ে বাপ্পা মজুমদারকে জিজ্ঞেস করুন। আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ যা করার তিনি করবেন, যা বলার তিনি বলবেন। আমি কিছু বলব না। আমি বিয়ে করেছি সংসার করার জন্য, এরপর যা হবে তা তিনিই জানেন।

প্রশ্ন : গুঞ্জন ওঠেছে আপনারা আলাদা থাকছেন…

চাঁদনী: আমি এগুলো নিয়ে কী বলব? এসব বিষয় নিয়ে নিজেই দ্বিধায় পড়ে গেছি। সংসার করার জন্য আমি মাঝে নাটকে অভিনয় করা ছেড়ে দিলাম। চার বছর কাজ করিনি। তখন থেকে শুনতেছি ডিভোর্স হচ্ছে, ডিভোর্স হচ্ছে। এ নিয়ে বেশ কিছু পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এরকম অনেক কিছু আমার লাইফে ঘটেছে। ২০১১-১২ সালের দিকে অনেক সাংবাদিক ফোন করে জিজ্ঞেস করেছেন- আপনি কই? শুনলাম ডিভোর্স হয়ে গেছে!

কথা শুনে আমি তো অবাক! অথচ তখন আমাদের কিছুই হয়নি। আসলে আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। যা জানার বাপ্পার কাছ থেকেই জেনে নিন। তার সম্মানের জন্য আগেও চুপ ছিলাম, এখনো আছি।

প্রশ্ন : যদি দাম্পত্য জীবনে আপনারা ভালো থেকে থাকেন তবে সেটা আপনার ভক্তদের জানানো ভালো নয় কি?

চাঁদনী: এটাই লিখে দেন, আমরা ভালো আছি। আমি ছোটবেলা থেকেই মিডিয়াতে কাজ করছি। আমি কিন্তু অভাবের কারণে মিডিয়াতে কাজ করতে আসিনি। আমার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আমি নাচ করতাম। তারপর একে একে সামনে এগিয়ে যাই। যখন আমি চূড়ান্ত একটি জায়গায় পৌঁছাই তখন ঘটে বিয়ের ঘটনা। বাপ্পার সঙ্গে কিন্তু আমার প্রেমের বিয়ে না। সেটেল ম্যারেজ। তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।

প্রশ্ন : বিয়ের পেছনের গল্পটা জানতে চাই।

চাঁদনী: ২০০৮ সালে আমরা বিয়ে করি। বিয়ের আগে আমার মায়ের পা ধরে বাপ্পা মজুমদার তিন ঘণ্টা বসেছিলেন। মায়ের প্রতি যার এতটা সম্মান সেটা দেখে আমি মুগ্ধ হই। কারণ যে ছেলে মায়ের পা ধরে বসে থাকতে পারে, সে নিশ্চয় তার স্ত্রীকে সম্মান করবেন, ভালোবাসবেন সেটাই স্বাভাবিক। তারপর তিনি একদিন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। বললেন, ‘কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করবে, তবে আমাকে বিয়ে করলে তোমার ক্ষতি কি?’ আমি বললাম, ‘যদি আপনি আমার বাবা-মাকে রাজি করাতে পারেন তবে আমার কোনো আপত্তি নেই।’ তারপর পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আকস্মিক ঘটে। কারণ পরিবার থেকে বিয়ের আয়োজন যেদিন করা হয় তার আগের দিনও আমি শুটিংয়ে ছিলাম। অভিনেতা গাজী রাকায়েত ভাইও আমার সঙ্গে শুটিংয়ে ছিলেন। তিনিও এসব জানেন। আমি বাপ্পার বাবাকে দেখিনি। তার মাকে দেখেছি। বাপ্পার মায়ের জন্য আজ পর্যন্ত আমি স্তব্ধ। আমার শ্বাশুরিকে ভালোবাসি। তাকে সম্মান করি। আর সঞ্জীবদা বেঁচে থাকলে আমার লাইফটা হয়তো আজ এমন হতো না।

প্রশ্ন : আসলে এখন আপনারা কেমন আছেন? আপনারা কী সংসার করছেন?

চাঁদনী: আমি জানি না। তাকে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হবে। আমি আমার সম্মান ধরে রাখতে চাই। তার যদি কিছু বলার থাকে কিছু ঘটাবার থাকে তবে আমি চাই সেটা তিনি বলুক। কারণ আমার পরিবারের একটা সম্মান আছে যা আমি ধরে রাখতে চাই। আপনি লিখুন, আমরা নিয়মিত কাজ করছি, ভালো আছি।

প্রশ্ন : আমি বিভ্রান্ত হচ্ছি কারণ আপনার বক্তব্য বুঝতে পারছি না..

চাঁদনী : হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমার কপালে ভুল কিছু লিখেছিলেন কিংবা কাউকে বিশ্বাস করা আমারই ভুল। আমি বাপ্পার মাকে ওয়াদা করেছি, আমি সে ওয়াদা রাখব। আমি সবার সম্মান রাখব। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। আমি বলব না, আমাদের ডিভোর্স হয়েছে কিনা। আমাদের কী হচ্ছে, না-হচ্ছে তাও আমি কাউকে বলিনি, বলব না। আমি এসব কেন বলতে যাব? যত কিছুই হোক, ‘মেয়ে মানুষ সারাজীবন নষ্ট, মেয়ে মানুষের ক্যারেক্টার লুজ- এই মেয়ে তো সংসার করতে পারবে না তা জানতাম।’ এসব কথা আমি মানুষের মুখ থেকে শুনতে পারব না। আমার সম্মান সবার আগে। আমার পরিবারের সম্মান এমনকি বাপ্পার পরিবারের সম্মানও আমি রক্ষা করে চলব। আমি চাই, তিনি যা করতে চাচ্ছেন কিংবা যা করবেন সেটা তার মুখ থেকেই বের হোক। কারণ আমি ভিকটিম। আমরা আলাদা থাকছি কি থাকছি না এরপরও যদি আপনার প্রশ্ন থাকে তবে বাপ্পাকে করুন। কাল (রোববার) সারাদিন অনেক সাংবাদিক ফোন করেছেন কারো ফোন ধরিনি। মনে হয়, আমি মারা গেলেও এত ফোন আসত না, যতটা ফোন কাল এসেছে।

প্রশ্ন : সাংবাদিকদের ফোন ধরছেন না কেন?

চাঁদনী : দেখুন, একবার জীবিত থাকা অবস্থায় আমাকে সাংবাদিকরা মেরে ফেলল। আমি নাকি আত্মহত্যা করেছি। আমার সঙ্গে কথা না বলেই কোনো রকম সত্যতা যাচাই না করেই খবর প্রকাশ করল। অথচ সেদিন আমি একটি নাচের অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমি দিব্যি বেঁচে আছি। আমি কেন মরতে যাব? আমি পরিবারের ছোট মেয়ে। আমারও পরিবারের প্রতি দায়িত্ব আছে। আমার পরিবার আছে, আমার স্বামী আছে, আমি কেন মরতে যাব? আর আমি যদি কখনো দেশ ছেড়ে চলে যাই সেটাও খোলাসা করেই যাব। কারণ ওখানে আমার গ্রিণ কার্ড আছে। এসব উল্টাপাল্টা খবরের জন্য আমি গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ ফিল্মটি করতে পারিনি। সেদিন আমি মগবাজারের বাসায় বসা। বাপ্পা মজুমদারের পাশে বসা অথচ মানুষজন বলে বেড়াল- আমি নাকি দেশের বাইরে চলে গেছি। এ কারণে অনেক ভালো কাজ আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু এসব রাগ আমি কার উপর দেখাবো? কারো উপর তো দেখাতে পারি না। এভাবে অনেকে আমাকে ভুল বুঝেছেন। যারা ভুল বুঝেছেন তাদের তো ধরে ধরে আমি এসব বোঝাতে পারি না। আমার আত্মহত্যার ভুয়া খবর প্রকাশের সময় কোনো সাংবাদিক আমাকে ফোন করেনি। তবে কেন এখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে যাব? আমার মতো মানুষকে নিয়ে এ ধরণের সংবাদ প্রকাশ হবে এটা ভেবেই তো অবাক হই! রাইজিংবিডি

Share