স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনাল থেকে বিদায় ঘটে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। তাই বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরলো ব্রাজিল ফুটবল দল। বিমানবন্দরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। শেষ আট থেকে বিদায় ঘটলেও বীরের মতোই সংবর্ধনা পেল ব্রাজিল। সমর্থকদের ভালোবাসার সাথে ব্রাজিল ফুটবল সংস্থাও দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে।
বিশ্বকাপে সাফল্য না পেয়েও এই প্রথম সংবর্ধনা পেল ব্রাজিল। পাশাপাশি এই প্রথম কোনো অসফল কোচকে তাড়া খেতে হয়নি। কোচ হিসেবে সফল তিতে, এমনটাই মনে করেন সমর্থকরা।
তবে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিজ বাসায় ফিরেন ব্রাজিলের অধিনায়ক নেইমার। বিমান বন্দরের হল থেকে একে-একে সবাই বের হয়ে বাইরে আসলেও, বের হননি নেইমার। তাই নেইমারকে দেখতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছে সমর্থকরা।
পরে রিও বিমানবন্দরের কর্মীরা জানান, ব্রাজিল দল বিমান বন্দর থেকে নেমে হলের দিকে আসলেও নেইমার আসেননি । রানওয়ে থেকেই নিজ হেলিকপ্টারে চড়ে নিজ বাড়ির পথে উড়াল দেন তিনি।
আরো পড়ুন : খেলার শক্তি হারিয়ে ফেলা নেইমার যে দিক দিয়ে এগিয়ে
প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। সেলেকাওদের চমৎকার সব শট রুখে দিয়েছেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক। কয়েকটা নিশ্চিত গোলের সুযোগ হেলায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে ব্রাজিলের। দিনশেষে তাই ব্যর্থ মনোরথে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে নেইমার-কুতিনহো বাহিনীর। এমন বিদায় খুবই পীড়া দিচ্ছে নেইমারকে। এটিকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিষন্ন মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এমন বিদায়ের পর তার মনে হচ্ছে ফুটবল খেলার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছেন।
ইনস্টাগ্রামে নেইমার জানান, ‘বলতে দ্বিধা নেই এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিষণœ মুহূর্ত। খুবই বেদনাদায়ক। কারণ আমরা জানি যে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলতে পারতাম। ইতিহাস গড়তে পারতাম। কিন্তু সেটা আমরা পারিনি। আসলে এমন বিদায়ের পর ফুটবল খেলার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছি। আমি নিশ্চিত সৃষ্টিকর্তা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার শক্তি আমায় দেবেন। আমি কখনোই সৃষ্টিকর্তার নাম নিতে ভুলব না। এমনকি পরাজয়ের পরও না। আমি এই দলের অংশ হতে পেরে আনন্দিত। যা কিছু হয়েছে তার সবকিছুর জন্য আমি গর্বিত। যদিও আমাদের স্বপ্ন ভেঙেছে। কিন্তু স্বপ্ন আমাদের মস্তিষ্কে থাকবে, থাকবে হৃদয়ে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি আরো লিখেন, ‘আমি তাদের সবার কাছেই কৃতজ্ঞ যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, মেসেজ দিয়েছেন, শুভকামনা জানিয়েছেন।’
কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গেছে ব্রাজিলের হেক্সা মিশন। তবে প্রথম ম্যাচের তুলনায় পরবর্তী ম্যাচগুলোতে পর্যায়ক্রমে উন্নতি করেছে তিতের শিষ্যরা। এবারের বিশ্বকাপে নেইমারের ডাইভ ও প্রতিপক্ষের ট্যাকেলে অতিরঞ্জিত আচরণ তার পারফরম্যান্সকেও ছাপিয়ে গেছে। তার এমন অভিনয়ে রীতিমতো বিরক্ত ফুটবলবোদ্ধা ও সমালোচকেরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে তার এই অতিরঞ্জিত আচরণটুকু বাদ দিলে দুর্দান্ত খেলেছেন ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকার। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত তিনি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ১৫৯ জন ফরোয়ার্ডের চেয়ে অনেক দিক দিয়েই এগিয়ে আছেন।
যেসব দিক দিয়ে নেইমার অন্যদের চেয়ে এগিয়ে :
১. বক্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাস সম্পন্ন করেছেন নেইমার। পাঁচ ম্যাচে ডি বক্সের মধ্যে তিনি ২৮টি পাস দিয়েছেন।
২. এবারের বিশ্বকাপে তিনি ১৬টি কিলার পাস দিয়েছেন যা যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি।
৩. বক্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯ বার বল স্পর্শ করেছেন তিনি।
৪. বল পোসেসনেও তিনি সবচেয়ে এগিয়ে। এবারের বিশ্বকাপে তার অন বল প্রোগ্রেসন অ্যাডেড, ১.৯৯।
৫. এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ২৬ বার ফাউলের শিকার হয়েছেন নেইমার।
৬. সবচেয়ে বেশি ২৭ বার শট নিয়েছেন নেইমার। তার মধ্যে ১৩টি ছিল অন টার্গেটে। ৫টি অফ টার্গেটে। ৯টি শট গোলরক্ষক ধরে ফেলেছেন।
৭. বিশ্বকাপে নেইমারের পাসিং ভ্যালু অ্যাডেড ২.৮৭, যা এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৮. নেইমার ১৯টি পরিপূর্ণ ড্রিবলিং করেছেন, যা এবারের বিশ্বকাপে তৃতীয় সর্বোচ্চ।