নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে জনগণকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে টিকা দিয়েছি বলে গণমাধ্যমে এসেছে। এটা সঠিক নয়। উল্টো আমরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে জনগণকে টিকা দিয়েছি। ডাব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) তথ্য দিয়ে থাকলেও সেটা সঠিক নয়।
টিআইবির প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের প্রতিবেদন যে গ্রহণ করিনি সেটাই বললাম। আমরা অবশ্যই এটা প্রত্যাখ্যান করি। একটা সংস্থা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। যেহেতু এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিআইবির একটি রিপোর্ট এসেছে। কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই, কারণ সেখানে কিছু তথ্য আছে যা সঠিক নয়। টিআইবি বিশ্বজুড়ে কাজ করে। আমরা ভালো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সংস্থা, এরমধ্যে টিআইবিও হয়তো এটিকে গুরুত্ব দেয় না। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
টিআইবির সার্ভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সার্ভের কিছু পদ্ধতি থাকে। এর মধ্যে মূল বিষয় থাকে কত লোকের মধ্যে করা হয়েছে। আমাদের সাড়ে ৭০০ স্থায়ী টিকাকেন্দ্র। অস্থায়ী এক লাখ ৪০ হাজার। আর পার্মানেন্ট বুথ সাড়ে তিন হাজার। অথচ সার্ভে করা হয়েছে ১০৫টি সেন্টারের। আর টেলিফোনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে তথ্য। টেলিফোনের তথ্য সঠিক হওয়ার কথা নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো বলেন, ১২ কোটি ৮৪ লাখ টিকা দিয়েছি। কিন্তু সার্ভে করা হয়েছে মাত্র ১৮শ’ লোকের মধ্যে। এত ছোট পরিসরের সার্ভেতে সঠিক তথ্য আসেনি। এখানে ১৩ কোটি লোক সেবা নিয়েছে। এই সার্ভের সাইজ এত ছোট যে সঠিক হিসাব নিতে পারি না।
তিনি বলেন, ২৫ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে পারেনি, তার মানে ৩-৪ লাখ মানুষ টিকা নেয়নি সেটা তো নয়। ৪০ লাখ ষাটোর্ধ্বো লোক টিকা পায়নি বলা হয়েছে, কিন্তু আছে এক কোটির কিছু বেশি। আমাদের তো ষাটোর্ধ্ব কারো টিকা দেওয়া বাকি নেই। যারা নেয়নি নিজ ইচ্ছায় নেয়নি। আমরা তাদের সবার আগে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ইন্টারনেটে রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনেকে টিকা নিতে পারেনি বলা হয়েছে, কিন্তু আমরা বলেছি কেউ কোনো কাগজ না নিলেও টিকা দিতে।
টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুস দেওয়া হয়েছে টিআইবির এই দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, বলা হয়েছে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুস দেওয়া হয়েছে, সেটার সংখ্যা কত ৬৭ টাকা। ৬৭ টাকা তো ফকিরকে দিলেও নেয় না। দেড় হাজার দুই-তিন কেন্দ্রে ঘুসের কথা বলা হয়েছে এটাও সঠিক নয়।
মন্ত্রী আরো বলেন, টিকা প্রথমে ভারত থেকে কিনেছি। চায়নার থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে টিকা কিনেছি। ১০ কোটির মতো টিকা কিনেছি। সাড়ে ৯ কোটির ওপর টিকা বিনামূল্যে পেয়েছি। বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা বিনামূল্যে পেয়েছে। সবচেয়ে দামি টিকা মডার্না, ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা বিনামূল্যে পেয়েছি। দামের বিষয়ে ভুল বোঝা হয়েছে। টিকাতে বাংলাদেশ সরকারের খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। প্লেনে আনা-রাখাসহ সব মিলিয়ে এ খরচ। আর বাকি ২০ হাজার কোটি টাকার টিকা ফ্রি পেয়েছি। যা প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা। ফলে সব মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার টিকা বাংলাদেশের মানুষকে ফ্রি দিতে পেরেছি।
করোনা টেস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা (টিআইবি) বলে ল্যাব সংখ্যা খুব কম। আগে একটা ল্যাব ছিল, সেখানে ৮৭০টি বিভিন্ন পর্যায়ে ল্যাব হয়েছে। বেশিরভাগ সময় বিনামূল্যে টেস্ট করিয়েছি। প্রাইভেট সেক্টর টেস্ট করেছে ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ সরকারি ল্যাবে হয়েছে। ৫ হাজার টেস্ট হয় এখন, কখনো ৫০ হাজারও করেছি। তখন তো চাপ বেশি পড়ে, তাই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারার কথা না।
করোনায় বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবার বিষয়ে টিআইবির প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিকিৎসা ভালো দিতে পারিনি বলা হয়েছে, আমাদের নাকি বেড ছিল না। তারা ৮ মাসের সার্ভের কথা বলেছে, কিন্তু কোভিড তো দুই বছর ধরে। বেডের কোনো ঘাটতি ছিল না। আইসিইউতে কিছুটা সংকট ছিল। আর ভ্যান্টিলেটর ইজ নট সলিউশন, ভ্যান্টিলেটর খালিই ছিল। বাংলাদেশে এমন কোনো হাসপাতাল নেই যেখানে অক্সিজেন ছিল না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণ এবং টিকাদানে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল। টিকার কার্যক্রম অনেক দেশের তুলনায় ভালো করেছি। প্রায় ১৩ কোটি প্রথম ডোজের টিকা দিয়েছি। সেকেন্ড ডোজ দিয়েছি ১১ কোটি ৬০ লাখ। বুস্টার ডোজ এক কোটি ১৯ লাখ। প্রথম ডোজ ৯৬ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ ৮৭ শতাংশ এবং বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে ৯ শতাংশ। এতে দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল হয়েছে।