নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর বনশ্রীর রাস্তায় দিনের পর দিন জমে থাকে পানি। গর্ত থেকে সতর্কতার জন্য টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল নিশান
জলাবদ্ধতার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স’র (বিআইপি) সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আকতার মাহমুদ বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৯ বছরের মাস্টারপ্ল্যান ছিল ওয়াসার। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কারণে নষ্ট হয়েছে অনেক ড্রেন। অগভীর ড্রেন পরিষ্কার না করায় ময়লা জমে পানি প্রবাহে বাধা তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি রাস্তা থেকে ড্রেন দিয়ে খালে পড়বে। কিন্তু দখল-দূষণে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। পানি ধারণের জায়গা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে ঢাকা।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ বছর গত বারের তুলনায় বৃষ্টি কয়েকগুণ বেশি হয়েছে। বর্ষার এখনো ১৫ দিন বাকি থাকলেও হালকা বৃষ্টিতেই রাজধানীর রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। গতকালের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধানীর মিরপুর, মানিকনগর, মালিবাগ, ওয়্যারলেস, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, পল্লবী সাংবাদিক কলোনির সামনে কালশী রোড, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন এলাকা।
সরেজমিন আগারগাঁ-মিরপুর ১০ এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার মাঝে চলছে মেট্রোরেল প্রজেক্টের কাজ। দুই পাশে পানি জমে রাস্তা থেকে শুরু করে ডুবে গেছে ফুটপাথও। পানি ঠেলে ঢিমেতালে যাতায়াত করছে যানবাহন। বৃষ্টির কারণে মেট্রো রেল প্রজেক্টের কাজে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি আর কাদায় কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা। প্রকল্পের ভিতরে স্তূপ করে রাখা বালু বৃষ্টির পানিতে কাদায় পরিণত হয়েছে। হাঁটু পরিমাণ কাদায় পুনরায় বালু ফেলে শুরু করতে হচ্ছে কাজ। একই অবস্থা মিরপুর ১০ থেকে মিরপুর ১৪ নম্বরে যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত। রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। বেশি বিপদে পড়েছেন সকালে অফিসগামী যাত্রীরা। এর মধ্যে যানজটে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে মোটরসাইকেল আরোহীদের। রাস্তায় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় বেশ কয়েকটি প্রাইভেট কার ও সিএনজি। কারওয়ান বাজার এলাকার বেশ কিছু জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ওয়াসা ভবনের সামনে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে যায় এলাকা। যেসব এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে মাটি উপরে রাখা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে সেসব এলাকায় ময়লা আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে গর্ত। এখন এসব গর্ত দুর্ঘটনার ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানিতে রাস্তা ডুবে থাকায় বুঝতে না পেরে কাদা ভরাট এসব গর্তে আটকা পড়ছে রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এমনকি বাসও। ফলে দুর্ঘটনায় পড়ছেন নগরবাসী।
বৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের মুখে থৈ থৈ করছে পানিতে। পানির মধ্যে দিয়ে ঢিমেতালে চলছে যানবাহন। বিকালে বৃষ্টির কারণে একদিকে তীব্র যানজট, অন্যদিকে যানবাহনের সংকটে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। রাজধানীর পাঁচটি প্রধান সড়কেই ছিল তীব্র যানজট। দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে থাকতে হয় নগরবাসীকে। বিভিন্ন এলাকায় পরিবহনের সংকটে বাড়ি ফিরতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এই জলজটের সমাধান জানতে চাইলে নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সমন্বয়হীনতা ঢাকা ডোবার বড় কারণ। তাই নগর সরকারের আওতায় ৫৪টি সেবা সংস্থাকে নিয়ে আসলে সমন্বয়হীনতার সমাধান হবে। যে কোনো সংস্থা ইচ্ছামতো খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, রাস্তায় ইউটিলিটি পোর্ট তৈরি করতে হবে। এতে করে রাস্তা খুঁড়েই সেবা সংস্থাগুলো তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। নদী-খালকে দখলদারদের থাবা থেকে মুক্ত করে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। বক্স কালভার্ট ময়লা জমে পানি প্রবাহের রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোকে অবমুক্ত করতে হবে, অথবা পরিচ্ছন্ন করে জলজট সমস্যার সমাধান করতে হবে। সূত্র: বিডি-প্রতিদিন